মাহাবুব আলম, রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রাণীশংকৈল

বাদাম বিক্রি করে সংসার চালান বৃদ্ধ মজিদ মুন্সি

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মধ্য ভান্ডারা রংপুরিয়া মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ মুন্সি। বয়স প্রায় ৯৫ বছর। তার সংসার জীবনে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। তবে মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে।

গত শনিবার বৃদ্ধ আবদুল মজিদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে সন্তানরা দেখভাল করছেন না। তাই, আমি নিজেই ভিক্ষাবৃত্তি না করে এই বয়সে ঘাড়ে করে বাদাম বিক্রির কাজ করছি। কারণ ভিক্ষা করা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণার কাজ। বাদাম বিক্রির টাকায় অতি কষ্টে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। যতদিন বেঁচে আছি কি করবো আর, কিছুই তো করতে পারি না এখন বয়সের ভারে।’

আবদুল মজিদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, বয়সের ভারে তেমন একটা চোখে দেখেন না তিনি। চশমার সাহায্য নিয়েই চলতে হয় তাকে। তবু জীবিকার সন্ধানে এই মাঘের হাঁড় কাঁপা কনকনে শীতে সকাল হলেই কাঁধে গামছা আর বাদামের ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাদাম বিক্রি করতে।

মজিদ মুন্সির বলেন, আমি ১০ বছর থেকে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

বাদাম বিক্রি করেই সংসার চালানোর

পাশাপাশি অসুস্থ স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে হয় আমাকে। আমি নিজেও অসুস্থ শরীর নিয়েই প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করি। মজিদ মুন্সির

দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে ভ্যান চালান, আরেক ছেলে কুলির কাজ করে তাদের সংসার পরিচালনা করেন।

বয়স্ক ভাতা সম্পর্কে মজিদ মুন্সিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিন মাস পর পর বয়স্ক ভাতার টাকা পাই। তবে সেই টাকা দিয়ে কি আর সংসার চলে। শুধু তো সংসার না, নিজের ও অসুস্থ স্ত্রীর জন্য আমার প্রতিদিন ওষুধ লাগে। তাই সব মিলিয়ে আমাকে এই শেষ বয়সে এসেও জীবিকার তাগিদে বাদামের ভার ঘাড়ে তুলে নিতে হয়েছে। প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হতে হয় বাদামের ব্যবসার জন্য।

সারাদিনে বাদাম বিক্রি করে কত টাকা পাওয়া যায় জানতে চাইলে মজিদ মুন্সি বলেন,

আল্লাহ আমার রিজিকে প্রতিদিন যেটা রেখেছেন তাই হয়। তবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা প্রতিদিন আমার লাভ হয়। আমি বাদাম বিক্রির আগে সুটকির ব্যবসা করে সংসার পরিচালনা করে আসছিলাম। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পুঁজি না থাকায় সে ব্যবসা করতে পারিনি।

আব্দুল মান্নান ও রেজওয়ান আহম্মেদ দুলাল বলেন, এই বৃদ্ধ যেভাবে এই বয়সে এসে ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজে ব্যবসা করছেন এজন্য তিনি সমাজের মানুষের কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তবে তাকে সবসময় দেখি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাদাম বিক্রি করতে। তাকে দেখলেও অনেক মায়া হয়। তাই বাদাম খাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও তার কাছে বাদাম কেনে অনেক মানুষ। তবে তার জন্য সরকারিভাবেই হোক বা এলাকার বিত্তবানদের সহযোগিতায় হোক স্থায়ীভাবে কিছু করা প্রয়োজন।

মজিদ মুন্সির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, তার সঙ্গে কথা বলে এবং সে আমাদের সমাজসেবার নিয়মের যে ক্যাটাগরিতে পড়বে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ইনশাল্লাহ। 

রানীশংকৈল পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, ওই বৃদ্ধের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাকে কীভাবে সহযোগিতা করলে ভালো হয় সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close