তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
তাড়াশে পুকুর খনন
জলাবদ্ধতায় চার হাজার বিঘা জমি, আবাদ নেই ৮ বছর

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে গত শুক্রবার রাতের অন্ধকারে প্রায় ১৫০ বিঘা তিন ফসলি জমিতে আবারও পুকুর খনন শুরু করলে একটি ৭০ লাখ টাকা দামের এক্সকাভেটর (ভেকু মেশিন) পুড়িয়ে দিয়েছে।
বিষয়টি তাড়াশ থানার ওসি আসলাম হোসেন নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মামলা, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা, বছর বছর কৃষক আন্দোলন উপেক্ষা করে গত দেড় দশকে তাড়াশ সদর ইউনিয়ন এলাকার মাধবপুর, মথুরাপুর, চক গোপীনাথপুর, আগরপুর, বিদিমাগুড়া, শ্রীকৃষ্ণপুর, সাস্তানসহ আশপাশের আরো কয়েকটি গ্রামের ফসলি মাঠের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হয়ে গেছে। তাতেই এলাকার প্রায় ১০টি গ্রামের কৃষকের প্রায় চার হাজার বিঘা ফসলি জমি জলাবদ্ধের কবলে পড়েছে।
সম্প্রতি এ এলাকার কয়েক জন প্রভাবশালী মাধবপুর গ্রামের মৌজায় কৃষক গোলাপ হোসেন, মকুল হোসেন, সোরহাব আলী, আব্দুল মালেকসহ ২০ থেকে ২৫ জন কৃষকের প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে পুকুর খননের জন্য বিঘায় ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে সবকিছু ম্যানেজ করে পুকুর খনন করে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। পাশাপাশি গত শুক্রবার রাতে এক্সকাভেটর মেশিন বা খনন যন্ত্র দিয়ে গভীর রাতে পুকুর খনন কাজ শুরু করেন। আর এটি দিয়ে গভীর রাতে পুকুর খনন কাজ করার শব্দ পেয়ে মাধবপুর, বিদিমাগুড়া, মথুরাপুরসহ কয়েক গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক বিক্ষুব্ধ নারী ও পুরুষ একত্রিত হয়ে ওই রাতেই এক্সকাভেটর মেশিন ঘিরে রেখে পুকুর কাটার প্রতিবাদ করতে থাকে। এ সময় কাজ বন্ধ করে খনন যন্ত্রের চালক পালিয়ে যান। তখন বিক্ষুব্ধ কৃষকদের মধ্যে কয়েকজন ওই খনন যন্ত্রে আগুন দেয়। এখন পর্যন্ত এ মেশিনটির মালিকের পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে জানান তাড়াশ থানার উপ- পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার সরকার।
পুকুর খননকারীদের মধ্যে আব্দুল মালেক নামের একজন জমির মালিক বলেন, আমার জমিও জলাবদ্ধতায় আবাদ করতে পারছি না। তাই পুকুর কেটে কিছু আয় হবে। তাতে সংসার চলবে। এ আশায় পুকুর খনন করছি।
এদিকে তাড়াশ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকতার হোসেন জানান, পুকুর খননের ফলে তাড়াশ সদর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কৃষকের হাজার হাজার বিঘা জমি পতিত থাকছে। আর প্রায় আট বছর আবাদ করতে না পেরে বেশিসংখ্যক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা রাগে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। যার বহির্প্রকাশ হয় শুক্রবার রাতে ভেকু মেশিন পোড়ানো মধ্য দিয়ে।
পুকুর খনন প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা জুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। পুকুর খননকারী চক্র রাতে খনন কাজ করছে। তার পরও প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা, নিয়মিত মামলা করা অব্যাহত রেখেছে। আসলে প্রশাসনের সঙ্গে এলাকাবাসীকেও সচেতন হতে হবে। তা না হলে পুকুর খনন বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব।
"