জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ
কোটি টাকার বাঁধে কালো মাটি, ধসের শঙ্কা

নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই বালু আর জ্বালানিতে ব্যবহৃত কালো মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফসল রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ। পাশ থেকেই কালো মাটি উত্তোলন করে নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁধ। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৭০০ মিটার বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেড। কাজের শুরুতেই স্থানীয়দের অভিযোগ উঠেছে কাজের মান নিয়ে।
বছর বছর মাটি দিয়ে বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ করায় হাওরে মাটি সংকট দেখা দিচ্ছে। যার ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে ৩৫টি স্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বৃহৎ খরচার হাওরের ফসলরক্ষায় ঝুকিপূর্ণ ১৭০০ মিটার অংশে স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে কাজের শুরুতেই বাঁধে মাটি বদলে বালি ও হাওর এলাকায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত কালোমাটি ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনেও দেখা মিলল ফসলরক্ষা বাঁধে মাটির বদলে দেওয়া হচ্ছে বালি ও কালো মাটি। এই মাটি বাঁধের ব্যবহারের ফলে ঢলের পানি আসার সঙ্গে সঙ্গেই পানিতে মিশে যাবে বলে শঙ্কা স্থানীয় কৃষকদের।
মাটির বদলে কালো মাটি কেন ফেলা হচ্ছে জানতে চাইলে বাঁধের কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেডের কর্মচারীরা চটে গিয়ে বলেন কালো মাটি কিছু আসবেই।
এ বিষয়ে আতাউর রহমান খান লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক নুরুজ্জামান খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি প্রথমেই জানান বাঁধে কোনোরকম কালোমাটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। তার কাছে প্রতিবেদক তথ্য প্রমাণ নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, কালো মাটি যদি দিয়ে থাকে তাহলে আমি সেটা সরানোর ব্যবস্থা করবো।
স্থায়ী বাঁধের কাজে কালো মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে এটা আমরা এলাকার মানুষ সাধারণত রান্নার কাজে ব্যবহার করি। বাঁধের এই মাটি ফেলা ঠিক হচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের আবদুল আলিম বলেন, এত বড় একটি প্রকল্পে কেন যে তারা মাটির বদলে কালো মাটি ব্যবহার করছে এটা আমার বুঝে আসছে না। এই কালো মাটির বাঁধ কখনোই টেকসই হবে না বলে জানান তিনি।
উপজেলার রায়পুর গ্রামের রথিন্দ্র বর্মন বলেন, স্থায়ী একটা বাঁধ আমাদের হাওরের সুরক্ষার জন্য করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা যে মাটি জ্বালানির কাজে ব্যবহার করছি তা বাঁধে ফেলা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, কালো মাটি ব্যবহারের কথা আমিও শুনেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলেছি এসব মাটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের বোরো ফসলরক্ষায় রাধানগর থেকে রায়পুর পর্যন্ত ১৭০০ মিটার বাঁধের জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
"