শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিলুপ্ত প্রায় সেঁউতি

আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে প্রায় সবখানে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে। মাটির বাড়ির স্থলে
উঠেছে ইটের ঘর। কুঁড়েঘরের স্থান নিয়েছে দালান। মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো
সহজ করতে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, ব্যবহার হচ্ছে নানা রকম সব প্রযুক্তি।
এসব আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে
হারিয়ে যেতে বসেছে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পানি সেচের সেঁউতি। দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
জানা গেছে, এক সময় সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষিখেতে একসময় ডোবা-নালা, খাল-বিলের পানি সেচের কাজে ব্যবহার করা হতো স্যাওত। যা তৈরি করা হতো বালতি মতোই টিন দিয়ে। দুইধারে দড়ি লাগিয়ে দুইজনে টেনে টেনে পানি সেচের ব্যবস্থা করত। অপরদিকে ছোট ডিঙ্গি নৌকার মতোই কাঠের তৈরী যা খেতের পাশে থাকে যার উপরে রাখা হতো বালির বস্তা বা ভারি ছোট গাছের গুল। অপর দিকে খাল বিলে বাঁশের মাচায় দাড়িয়ে পায়ের চাপে সেচের ব্যবস্থা করা হতো। যা এ এলাকায় ঢেঁকি স্যাওত নামে পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার পুরাতন বা অতি পরিচিত স্যাওত। এক সময় এই স্যাওতের ব্যবহার ছিল ধনী-গরিব প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে। এখন আর চোখে পড়ে না তেমন ছোট ছোট ডোবা-নালা। কৃষকের জমির এক কানিতে দেখা যায় না মাছ ধরার গর্ত। যা এখন মাটি ভরাট করে চলছে কৃষি কাজ। আগের মতো হয় না বন্যা। জমিতে থাকে না পানি। কৃষক হয়ে পড়ছে যন্ত্রনির্ভর। বলা চলে ইঞ্জিনচালিত মেশিন স্টার্ট দিলে অথবা বিদ্যুৎচালিত মটরের
সুইচ অন করলেই উঠছে পানি। তার পরও মাঝেমধ্যে দেখা মেলে কৃষিকাজে ব্যবহার যোগ্য সেঁউতির।
রায়গঞ্জের গ্রামপাঙ্গাসীর কয়েকজন কৃষক জানান, একদিকে অধিক খরচ লাঘবে নিজেরা শ্রমের বিনিময়ে ছোট ছোট জমিগুলোতে সেঁউতি (স্যাওত) দিয়ে পানি দিলেও বড় বড় খেতের বেলায় বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পুরাতন এই ঐতিহ্য আজ অচল।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার চররায়পুর গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন জানান, বড় বড় প্রজেক্ট নয়- আজও নিজেদের বাড়ির আশেপাশে ছোট ছোট জমিগুলোতে আমরা পানি সেচের জন্য মটর বা শ্যালো মেশিনে খরচ বাচানো, নানা প্রতিকুলতার কারণে পানি দেয়ার জন্য স্যাওত ব্যবহার করে থাকি।
এলাকার সচেতন মহল জানান, নিজেদের বীজতলা তৈরি এবং কৃষি উৎপাদন কাজে পানি সেচের জন্য এক সময় বিভিন্ন খাল বিলে দেখা যেতো স্যাওত লাগিয়ে পানি নিত কৃষকেরা। সেদিনের সেই স্যাওতের ব্যাবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু বর্তমানে সেচের কাজটি মটর বা শ্যালো মেশিন দিয়ে ব্যবহার করার ফলে কৃষকের স্যাওত প্রায় বিলুপ্তির পথে।
খিচুরিপাড়ার কৃষক সাহেদ আলী বলেন,
খালের ধারে জমি থাকায় এবং তা প্রজেক্টের আওতায় না আসায় বাধ্য হয়েই বাপ-দাদার আমলের স্যাওত আজও ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন করে থাকি।
"