আবু সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা)
ছয় উপজেলায় নেই ১৩৩ চিকিৎসক, ভোগান্তি

বরগুনার ছয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ১৪৭ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে আছে মাত্র ১৪ জন। চিকিৎসক সংকট কাটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জেলায় ১৩ জন চিকিৎসক পদায়ন করা হলেও যোগদান করেছেন ৪ জন। বাকী ৯ জনকে যোগদান করাতে চলছে চিঠি চালাচালি। ফলে উপকূলীয় জেলার মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে রোগী ও স্বজনদের মাঝে। সচেতন নাগরিকদের দাবি, যথাযথ জবাবদীহিতা না থাকায় এমন সুযোগ নিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নানা অভিযোগ পুরানো। চিকিৎসক ও জনবল পদায়নের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলন সংগ্রাম করলেও হয়নি কোনো প্রতিকার। জেলার ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিভিল সার্জন অফিসে ১৪৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত ২৮ জন। যার মধ্যে ১৪ জন অনুমোদিত ছুটিতে থাকায় বর্তমানে কর্মস্থলে আছেন ১৪ জন চিকিৎসক। রয়েছে জনবল সংকট।
বরগুনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক সংকট কাটিয়ে উঠতে গত ১৮ ডিসেম্বর জেলায় ১৩ জন নতুন চিকিৎসক পদায়ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু তাদের মধ্যে যোগদান করেন ৪ জন, আর বাকীরা এখনো যোগদান করেননি। এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি চালাচালি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি।
জানা গেছে, জেলার পাথরঘাটা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। যেখানে ২৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কাগজে-কলমে কর্মরত ৪ জন। যার মধ্যে ২ জন অনুমোদিত ছুটিতে এবং একজন এম.এস রেসিডেন্সি কোর্সে যাবেন। বাকী একজন দিয়ে চলবে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বামনা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে ২৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত ৫ জন। কিন্তু একজন অনুমোদিত ছুটি এবং আরেক জন এম.ডি কোর্সে যাবেন। বেতাগী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত আছে ৫ জন। যার মধ্যে একজন অনুমোদিত ছুটিতে, একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্তিতে কর্মরত এবং আরেকজন এম.ডি কোর্সে যাবেন। আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কাগজে-কলমে কর্মরত ৪ জন। যার মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং আরেক এম.ডি কোর্সে যাবেন। আরো জানা গেছে, তালতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২ জন। এছাড়া বরগুনা সদর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৩ জনের বিপরীতে ৭ জন থাকলেও তাদের মধ্য থেকে ৪ জন বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তিতে কর্মরত এবং সিভিল সার্জন অফিসের ২ জন মেডিকেল অফিসারের স্থলে আছে একজন।
এদিকে গত ১৮ ডিসেম্বর বরগুনার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন করার পরও যোগদান না করা চিকিৎসকরা হলেন, ডা. নুর-ই জান্নাতুল ফেরদৌস, ডা: সাজ্জাদ হোসেন, ডা. পথিক বিশ্বাস, ডা. রাকিবুল হাসান, ডা. মানা শায়ন্তা ঘোষ, ডা. রাফসানা রউফ, ডা. ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. সাইফুর রহমান, ডা. বুশরা নওরীন। এদের কারো সঙ্গে যোগদান না করার বিষয়ে কথা বলা যায়নি।
জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (টিআইবি) সভাপতি মনির হোসেন কামাল জানান, বরগুনায় ডাক্তার সংকটের কারণে দীর্ঘ্যদিন ধরে মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ ডাক্তার পদায়ন করার পরও তারা যোগদান করছেন না। তার দাবি, চিকিৎসকদের যথাযথ জবাবদীহিতার আওতায় আনতে না পারার কারনে এমন সুযোগ নিচ্ছেন তারা।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি সোহেল হাফিজ এ বিষয়ে জানান, সুদীর্ঘ্য বছর স্বাস্থ্য বিভাগে চেইন অব কমেন্ট বলে কিছু নেই, যার কারণে ইচ্ছেমত নিয়োগ অথবা বদলীর রেওয়াজ চলমান। সরকারি চাকরি করে সরকারের নির্দেশনা মানবেন না এটা হতে পারেনা। এখান থেকে বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের সুফল আসবেনা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল জানান, জেলায় তীব্র ডাক্তার সংকট। এ সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠতে গত ১৮ ডিসেম্বর ১৩ জন ডাক্তার পদায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ৪ জন যোগদান করলেও বাকারী এখনো যোগদান করেনি। এ বিষয়ে দু’দফায় চিঠির মাধ্যমে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বদলী আদেশে ৩দিনের মধ্যে যোগদান করার কথা থাকলেও তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব দেননি। সরকারি চাকুরির বিধি অনুযায়ী এটা পারেন না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
"