সৈকত সোবাহান, বদলগাছী (নওগাঁ)
নওগাঁর বদলগাছী
চালু হয়নি গভীর নলকূপ বোরো চাষ নিয়ে শঙ্কা

নওগাঁর বদলগাছীতে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)’র সংযোগের সিএমও (কাস্টমার মিটার অর্ডার) বা সংযোগের ছাড়পত্র না দেওয়ায় গভীর নলকূপ চালু করতে পারছে না নতুন অপারেটর জোহানুর ইসলাম। এলাকাবাসীর অভিযোগ বদলগাছীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী ইন্তেখাফ আহম্মেদের বিভিন্ন তালবাহানায় নতুন অপারেটরকে সংযোগের ছাড়পত্র না দেওয়ায় এখন পর্যন্ত চাঁপাইনগরের গভীর নলকূপের সেচ কার্যক্রম। নলকূপটি চালু না হওয়ায় এলাকার ১৬০ বিঘা ইরি-বোরো চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে কৃষক।
জানা গেছে, সংযোগের কাগজপত্র নিয়ে নওগাঁর বদলগাছীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইন্তেখাফ আলমের কারণে এখনো পর্যন্ত চাঁপাইনগরের গভীর নলকূপটি চালু হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন কৃষকরা। নতুন অপরেটর নিয়োগ হওয়ার পরও নলকূপের সংযোগ না পাওয়ার কারণে নব নির্বাচিত অপারেট জোহানুর ইসলাম কে বহাল রেখে গভীর নলকূপটি চালুর জন্য উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বরাবর গত ২১ জানুয়ারি একটি আবেদন করেছে এলাকার কৃষকরা। তার অনুলিপি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক, জোনাল অফিস বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নওগাঁ-১, বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বদলগাছী প্রেসক্লাবকে।
গভীর নলকূপটি চালু না হওয়ায় এলাকার কৃষকরা ইরি-বোরো চাষাবাদ করতে পারচ্ছে না। আমন ধানের চাষাবাদ নিয়ে হতাশায় রয়েছে তারা।
আবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২ নম্বর মথরাপুর ইউনিয়নের চাঁপাইনগর মৌজার জেএল নং-২৫,দাগ নং-২৯৪ স্থাপনকৃত বরেন্দ্রের গভীর নলকূপটি পরিচালনার জন্য গত ৩১ ডিসেম্বর ওই গ্রামের জোহানুর ইসলাম কে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অপারেটর হিসাবে নির্বাচিত করে ঘোষনা দেয়। নব নির্বাচিত অপারেটর জোহানুর ইসলাম কে বহাল রাখতে এলাকার ৭২জন কৃষক স্বাক্ষর প্রদান করেন।
উপজেলার মথরাপুর ইউনিয়নের ২৫-৩০ জন কৃষকের জানান, তারা বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পরেও অপারেটর বদলাতে পারিনি। কিন্তু সরকার পতনের পর এলাকার কৃষকরা মিলে অপারেটর পরিবর্তন জন্য আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ ডিসেম্বর কৃষকদের পছন্দের কৃষক জোহানুর ইসলামকে বরন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অপারেটর হিসাবে নিয়োগ দেয়। এর মাঝে শামিউল ইসলাম নামের এক কুচক্রী ব্যক্তি সাবেক মাথুরাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী চৌধুরী টিপু সহযোগিতায় আবারও এই নলকূপের অপারেটর বদলাতে চেষ্টা করছে স্বার্থ হাসিলের জন্য। আর এই টিপু চৌধুরীর কথা মতো চলছে বদলগাছী বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইন্তেখাফ আলম। চাঁপাইনগর গভীর নলকূপটি চালুর জন্য আমরা সব কৃষকরা গত ১৫ জানুয়ারি একটি সভার আয়োজন হয়, সেখানে সবার সম্মতিক্রমে কৃষকরা আক্কাস আলীকে সভাপতি করে মোট ১৬ জনের একটি কমিটি করেন। এবং সেটি বদলগাছী বরেন্দ্র অফিসে জমা দেয়। এলাকার কৃষক জানে কে অপারেটর হলে ভালো হবে। কৃষকদের দাবি জোহানুরকে। সে নিজেই এই নলকূপ চালাবে।
চাঁপাইনগর গভীর নলকূপের কৃষক ও বর্তমান মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল মান্নান জানান, তার ওই খানে ৭ বিঘা জমি রয়েছে। নলকূপে এখনো কোন সংযোগ পাওয়া যায়নি। পনি না পাওয়ায় চাষাবাদ করতে পারেন নি। অপারেটতো নিয়োগ হয়েছে তাহলে সংযোগ পায়নি কেন বলে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, শামিউল নামের এক কুচক্রী ব্যক্তির হয়ে মথুরাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান টিপু চৌধুরীর চাঁপে বরেন্দ্রর সহকারী প্রকৌশলী নব নিয়োগকৃত আপারেটরকে সংযোগের কাগজ দিচ্ছেনা। তাই নলকূপটি চালু হচ্ছে না।
কমিটির সভাপতি আক্কাস আলী সহ কৃষক নজরুল, তোফাজ্জল এনামুল জানান, এই নলকূপে বর্তমানে ১৬০ বিঘা জমি রয়েছে। সংযোগ না পাওয়ায় ইরি-বোরো চাষাবাদ নিয়ে কৃষকরা হতাশার মধ্যে আছে। অপারেটর সহ আমরা কমিটির লোকজন ও এলাকার কৃষকরা সংযোগের জন্য কয়েকবার বরেন্দ্র অফিসের সহকারী প্রকৌশলীর কাছে গেলেও তিনি অপারেটর ঠিক রেখে টিপু চৌধুরীর পছন্দের ব্যক্তি শামিউলকে গভীর নলকূপটি পরিচালনার জন্য দ্বায়ীত্ব দিতে বলেন। এতে আমরা রাজি হয়নি তাই সংযোগের কাগজ দিচ্ছেনা।
এদিকে শামিউল ইসলাম বলেন, ‘আপনি বোঝেন না। আমার পিছনে কে আছে।’ আপনার ওই নলকূপে নাকি ৫ কাঠা জমি রয়েছে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন ‘এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো।’ কোনো কৃষকতো আপনাকে চাচ্ছে না বলে অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘সেটা সময়ে দেখা যাবে।’
এদিকে মথুরাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাদী চৌধুরী টিপু মুঠো ফোনে বলেন, ‘আমি কারো পক্ষে সুপারিশ করিনি। তবে আমি উভয়কে মিলেমিশে গভীর নলকূপটি চালাতে বলেছি।’
চাঁপাইনগর গভীর নলকূপের সংযোগের কাগজটি কেন অপারেটরকে দিচ্ছেন না বলে জানতে চাইলে সেচ কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী ইন্তেখাফ আলম (অঃদাঃ) বলেন, ‘মথুরাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান টিপু চৌধুরী বলেছিলেন তাই।’ তার কথা মতোই কি আপনাদের অপারেটর নিয়োগ বা গভীর নলকূপের সংযোগের কাগজ দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশ্ন করলে তিনি এই প্রতিবেদক কে বলেন ‘আপনি আমাকে চার্জ করতে পারেন না।’
এ বিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনি বলেন, আমি বিষয়টি দেখবো।
"