লামা (বান্দরবান) সংবাদদাতা

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

বান্দরবানের লামা

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে সেতু-কালভার্ট

বান্দরবানের লামায় বিভিন্ন খাল-ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রশাসন লাগাতার অভিযান করেও তা থামাতে পারছে না। ফলে ঝিরি, খাল-ছড়ার তীরবর্তী ফসলি জমি, রাস্তা, সেতু-কালভার্ট ভাঙনের কবলে।

জানা যায়, বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বালু মজুদ ও বিক্রি পয়েন্ট। আর বালু বহনকারী ট্রলি ও ট্রাক্টরগুলো বেপরোয়াভাবে যাতায়াত করায় গ্রামীণ সড়কগুলোও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার ফলে সরকারি সেতু-কালভার্ট হুমকির মুখে আছে।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি খাল ও শাখা প্রশাখা খাল-ছড়া থেকে চিহ্নিত সিন্ডিকেট সদস্যরা ১৫টিরও বেশি পয়েন্টে অনেকদিন থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এর ফলে সেখানে সড়কে একটি গার্ডার ব্রিজের বেইজের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আরেকটি ছোট সেতু ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে।

স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলেন, বালু উত্তোলনের ব্যাপারে কথা বললেই মিথ্যা মামলাসহ জীবননাশের হুমকি আসে। কিছুদিন আগে বালু উত্তোলনের রিপোর্ট প্রকাশ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিককে বালু সিন্ডিকেট মুঠোফোনে গালমন্দ ও হামলার হুমকিও দিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। লামা উপজেলার বিভিন্ন বালু পয়েন্ট অবৈধভাবে দখল নিয়েছে পাশের চকোরিয়া ডুলহাজারার কিছু প্রভাবশালী লোক। তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্রসহ রয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ।

লামা উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য এই উপজেলায় নির্দিষ্ট কোনো বালু মহল নেই। সরকারিভাবেও ইজারা প্রদান করা হয়নি কোনো বালুর পয়েন্ট। সুতরাং বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। অভিযোগ উঠেছে পাশের চকরিয়া উপজেলার প্রভাবশালী গ্রুপটি সরকারি নিয়মনীতি না মেনে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী পেতাইন্যাছড়া রাস্তার পাশে ছড়া ও ঝিরিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকাশ্যে ১২টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এর ফলে সেখানকার চলাচল রাস্তা, লামা উপজেলা সীমান্ত লাগুয়া কক্সবাজার বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের সংরক্ষিত বাগানের পাহাড় ধসে পড়ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে ঝিরি-ছড়ার পানি।

কক্সবাজার বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা জানান, কয়েকদফা অভিযান করে ড্রেজার মেশিন ও পাইপ কেটে দেওয়া হয়েছে, বালুসহ গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। তাছাড়া বালু উত্তোলন হচ্ছে পার্বত্য লামার অংশে। যৌথ অভিযান করলে কিছুটা সুফল আসতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

স্থানীয়রা জানান, কুমারি পেতাইন্যাছড়া অংশে বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের তাহের মেম্বার (ইউপি সদস্য), সরোয়ার, গিয়াস উদ্দিন ও মিরাজ গং। তারা প্রতিটি গাড়ি থেকে ২০০ টাকা করে নেয় বলে জানা যায়।

এ বিষয় জানতে চাইলে ইউপি সদস্য তাহের মুঠোফোনে জানান এসব কাজে তিনি জড়িত নন, তার নাম ভাঙিয়ে কে বা কারা এটা করছে। এই ইউপি সদস্য আরো বলেন, ‘সরোয়ার নামের একজন বালু উত্তোলন বিক্রয় কাজ সমন্বয় করছেন বলে শুনেছি। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ লামা প্রশাসনের দ্রুত কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।’

এ বিষয়ে লামা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়ন দেব জানান, প্রশাসন একের পর এক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত বেশ কিছু বালু তোলার সরঞ্জাম ধ্বংসসহ প্রায় ২০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ও সংশ্লিষ্ট ধারায় কয়েকটি মামলাও রুজু হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close