সৈকত সোবাহান, বদলগাছী (নওগাঁ)

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

বদলগাছীতে অভিযোগ

জাল স্বাক্ষরে টিসিবি ডিলারকে ওএমএসের চাল, টাকা ভাগাভাগী

ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস ইউএনও ইসরাত জাহান ছনির * টিসিবি ফ্যামেলি কার্ডধারীর সংখ্যা ১১৭৮৮ জন

নওগাঁর বদলগাছীতে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাবরিন মোস্তারীর যোগসাজসে পূর্বের ওএমএস ডিলার হাসানুজ্জামানের সহযোগিতায় ওএমএস ডিলারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে চাল উত্তোলন করে টিসিবি ডিলারকে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ডিলারদের নামমাত্র লাভে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সাবরিন মোস্তারী গত ৫ মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা পকেটে ভরেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ওএমএসের ডিলাররা।

উপজেলায় ৫ জন খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয়ের ওএমএস ডিলার ছিল। এর মধ্যে হাসানুজ্জামান নামক এক ডিলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের আবেদন সময় ওএমএস ডিলার থেকে পদত্যাগ করে। বর্তমানে বদলগাছী উপজেলাতে খাদ্য অধিদপ্তরের ৪ জন ওএমএসএর ডিলার আছে।

জানা গেছে, বদলগাছী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ফ্যামেলি কার্ডধারীর সংখ্যা মোট ১১ হাজার ৭৮৮ জন। এরা প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তা হিসেবে টিসিবির পণ্যের সাথে খাদ্য অধিদপ্তরের ওএমএসের ৫ কেজি করে চাল পান। যা প্রতি মাসে জনপ্রতি ৩০ টাকা দরে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে (১১ হাজার ৭৮৮ জন) ৫ কেজি করে মোট ৫৮ হাজার ৯৪০ কেজি চাল ওএমএস ডিলারের সহযোগিতায় টিসিবি ডিলারগণ সেই চাল বিক্রয় করেন। খোলা বাজারে খাদ্যশষ্য বিক্রি করলে প্রতি কেজি চাল থেকে ওএমএস ডিলারগণ ২ টাকা করে কমিশন এবং টিসিবি ডিলাররা ২ টাকা কমিশন পান। এতে প্রতি মাসে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৮০ টাকা কমিশন পান উপজেলার ওএমএস ডিলাররা এবং সমপরিমাণ কমিশন পান উপজেলার টিসিবি ডিলাররা।

কিন্তু বিগত আগস্ট মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৫ মাসে ওএমএস ডিলারদের সবাইকে না জানিয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাবরিন মোস্তারী যোগশাজসে হাসানুজ্জামানের সহযোগিতায় খাদ্যশস্য চাল উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে ডিলারদের নামে টাকা জমা করে। এবং ডিওতে প্রতিমাসে দু-একজন ডিলারের স্বাক্ষর না নিয়ে নিজেরা জাল স্বাক্ষর করে খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তলোন করে। প্রতিটি ওএমএস ডিলারদের নাম মাত্র ৪ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। এবং তারা জনেও না তাদের নামে কতো টন চাল উত্তলোন হয়েছে। আর এসব চাল খাদ্য গুদামে বসে থেকে টিসিবির ডিলারকে ফোন দিয়ে ডেকে এনে চাল প্রদান করেন।

ওএমএসএর ডিলার আনোয়ার হোসেন টগর অভিযোগ করে বলেন, গত আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আমি প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে পেয়েছি। ডিসেম্বর মাসে আমাকে আড়াই হাজার টাকা দিয়েছে। যে সময় চাল উঠেছে সেই সময় আমি ডিওতে স্বাক্ষর করিনি পরে আমার কাছে কিছু কাগজ এনেছিল তখন নভেম্বর পর্যন্ত স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু ডিসেম্বরে চাল উত্তোলনে আমি কোনো ডিওতে ও খাদ্যগুদামের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করিনি। 

এসব বিষয়ে হাসানুজ্জামান বলেন, আমি এ বিষয়ে জানি না। অফিস ভালো বলতে পারবে।

চাল উত্তোলনের সময় ওএমএসএর ডিলারেরা কি আপনাদের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছিল? জানতে চাইলে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, আমি ডিওতে যে স্বাক্ষর পেয়েছি সেই স্বাক্ষর মিল করে নিয়েই চাল দিয়েছি। ডিলারের অভিযোগ, তারা চাল উত্তোলনের সময় খাদ্যগুদামে আসেনি আবার স্বাক্ষরও করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি একই কথা বলেন।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাবরিন মোস্তারী বলেন, ওএমএসের ডিলারেরা চাল উত্তলোনের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা করেছে। তাই আমি ডিও দিয়েছি। ২-১ জন ডিলার বলেছেন ৫ আগস্টের পর তারা ব্যাংকে চাল উত্তোলনের জন্য কোনো টাকা জমা করেনি। আবার ডিও নেওয়ার দিন এতে স্বাক্ষরও করেননি তাহলে স্বাক্ষর করল কে এমন প্রশ্নে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। গত ৫ মাসে ওএমএসএর চালের লভ্যাংশ হিসাবে নাম মাত্র টাকা ডিলারদের দেওয়া হয়েছে কেন, এমন পশ্নের জবাবে তিনি এই প্রতিনিধিকে নিউজ না করার অনুরোধ করেন। 

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার মোবাইল ফোনে বলেন, আমি খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি দেখছি।

বদলগাছী ইউএনও ইসরাত জাহান ছনি বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। আমি এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close