গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
গঙ্গাচড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
হাসপাতালে জনবল-ওষুধ সংকট মিলছে না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা

আধুনিক যন্ত্রপাতি, চিকিৎসক ও জনবল সংকট নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে চলছে গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতেই ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়া বর্তমান এই উপজেলায় বর্তমান জনসংখ্যা ২ লাখ ৮৭ হাজার ২১০ জন প্রায়। পরবর্তীতে রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ করা হলেও সেবার মান এখনো সন্তোষজনক নয় বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, অন্যান্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর মতোই গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুরুষ থেকে নারী রোগীর সংখ্যা বেশি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন শিশু, বয়স্কসহ মুমূর্ষু রোগী। অপরদিকে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। রোগী সংখ্যা অনুযায়ী চিকিৎসক অনেক কম, তুলনামূলক ওষুধ সংকট কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
রোগীদের অভিযোগ, রোগ নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি তেমন না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেতে হয় রংপুর শহরে। গঙ্গাচড়া উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়ন তিস্তা নদী কবলিত। এই পরিস্থিতিতে রোগীদের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা।
জানা গেছে , চিকিৎসকসহ নিম্ন জনবল সংকটে চালানো হচ্ছে হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম। এখানে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার সামান্য কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ থাকলেও সেসবের সুবিধা তেমন পান না রোগীরা। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন শতাধিক অসুস্থ শিশু, তরুণ তরুণী, যুবক ও বৃদ্ধ। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই দক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার ল্যাব-টেকনিশিয়ান।
গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, পদের সংখ্যা মোট ২৬টি, কর্মরত পদে রয়েছে ১৬ জন ও শূন্য পদের সংখ্যা ১০টি।
গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক (শূন্য) পদগুলো হলো- জুনিয়র কনসালটেন্ট (নাক, কান ও গলা), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), মেডিকেল কর্মকর্তা ২ জন মেডিকেল কর্মকর্তা (ইউনানী) মেডিকেল কর্মকর্তা (অ্যানেসথেটিস্ট) সহকারী নার্স পদ ১টি ইউনিয়ন সাব সেন্টার বেতগাড়ী ইউনিয়ন, খলেয়া ইউনিয়ন ও গঙ্গাচড়া ইউনিয়ন।
চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের আজিজুল ইসলাম (৫৫) বলেন, চোখের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। এসে দেখি ডাক্তার নেই। আমার কথা শুনে এক মহিলা ডাক্তার অনলাইনে পাঠায়। তারপর অনেক সময় ধরে বসে আছি। উপরের ডাক্তার কি চিকিৎসা দেয় সে অপেক্ষায় করছি।
বেদ গাড়ি ইউনিয়নের আমিনা বেগম (৫০) বলেন, আমার নাকের সমস্যা নিয়ে এসেছি কিন্তু নাকের ভালো ডাক্তার নাই। ভালো চিকিৎসা নিতে হলে রংপুর হাসপাতালে যেতে হবে।
বড়বিল ইউনিয়নের আমির আলী (৪৫) বলেন, আমার মেয়ের ঠান্ডাজনিত রোগে আমি দুই দিন থেকে রয়েছি। এখানে প্রয়োজনীয় তেমন ওষুধও পাওয়া যায় না। দু-একটি ওষুধ পাওয়া গেলেও বাকি ওষুধ প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাজার থেকে কিনে নিয়ে এসে মেয়েকে খাওয়াতে হচ্ছে।
ডাক্তার সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই উপজেলার মানুষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন অভিভাবক বলেন, প্রয়োজনীয় ওষুধও তেমনভাবে পাওয়া না। এখানে ভর্তি হওয়া রোগীরা রাতে যদি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে দেখার মতো ডাক্তার মেলে না। এখানে প্রয়োজন অনুযায়ী আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকা টেকনিশিয়ান ও দক্ষ জনবলের অভাবে চেকআপও বাইরে থেকে করে নিয়ে আসতে হচ্ছে। এছাড়া জরুরি বিভাগ, অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা প্রদান, আউটডোর ও অ্যাম্বুলেন্স সেবায় নেই পর্যাপ্ত লোকবল। এক প্রকার নাজুক অবস্থা গঙ্গাচড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
"