তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনা
তালতলীতে পুরোদমে শুরু বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন

বরগুনার তালতলীতে পুরোদমে শুরু হয়েছে বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন। কোনো ধরনের কীটনাশক ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হচ্ছে এসব শুঁটকি। শতাধিক চাতালে বাণিজ্যিকভাবে শুঁটকি উৎপাদনে জন্য কঠোর পরিশ্রম শুরু করছেন হাজারো শ্রমিক। প্রতি বছরই চলে এমন আয়োজন। এবারও নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত থাকবে এ ব্যস্ততা।
তবে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারীভাবে শুঁটকি রপ্তানি, সরকারীভাবে শুঁটকি উৎপাদনে জন্য প্রশিক্ষণ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সরকার থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ পেলে এই শুঁটকি শিল্পকে আরও বড় আকারে করা সম্ভব।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার জয়াল-ভাঙ্গা, আশারচর, সোনাকাটা, ফকিরহাটের চরগুলোতে ট্রলার বোঝাই মাছ ধরে আনে বঙ্গোপসাগর থেকে। ট্রলার থেকে শ্রমিকরা ঝুড়ি ভরে কাঁচামাছ নিয়ে যান জেলেপল্লিতে। এরপর মাছগুলো নারী শ্রমিকেরা পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে চাতালে ও বাঁশের মাচায় শুকাতে দেন। তার আগে মাছগুলো চিড়ে লবন দিয়ে রাখেন। আবার কোথাও শুকানোর জন্য বাঁশের খুঁটিতে মাছ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অপরদিকে শুকনো মাছ বাছাই করে এক পাশে রাখছেন কিছু শ্রমিক। সব শুঁটকিপল্লীতেই শ্রমিকদের এমন ব্যস্ততার চিত্র দেখা গেছে। শুঁটকিপল্লীর শ্রমিকেরা জানান, সেখানে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোয়া, চিংড়ি, ছুড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার, লইট্টা ৯০০ থেকে ১০০০, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানকার শুঁটকি বিষমুক্ত হওয়ায় প্রতি সপ্তাহে ১৫০ থেকে ২০০ মণ শুঁটকি চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশ-বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
আশারচর শুঁটকি পল্লী এলাকার বাসিন্দা কামাল মিয়া বলেন, আশারচর মূলত শুঁটকিপল্লী হিসেবে সবার পরিচিত। এখানে বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরি করা হয়। তাই শীত মৌসুমকে ঘিরে এই চরে শুঁটকি তৈরির হিড়িক পড়েছে। শুঁটকি ব্যবসায়ীরা নভেম্বর থেকে শুরু করে এপ্রিল মাস পর্যন্ত শুঁটকি তৈরি করেন এখানে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী বেল্লাল হোসেন ফারাবী বলেন, শীত মৌসুমকে সামনে রেখে শুঁটকি উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী, মাছ ধরা পড়ছে। তবে শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। আশা করছি, দেশ-বিদেশে এই শুঁটকি রপ্তানি হলে লাভবান হবো।
ফকিহার উপ মৎস্য অবতরন কেন্দ্রের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবর ফরাজী বলেন, এখন কেবলমাত্র মৌসুম শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে শুঁটকি উৎপাদনে এ কর্মযজ্ঞে জড়িত আছে কমবেশি ১২ হাজার মানুষ। এখানকার শুঁটকি অনেকটাই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদন করা হয়, তাই সব জায়গায় কম-বেশি চাহিদা আছে।
তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, তালতলী শুঁটকি উৎপাদনে সম্ভাবনাময় এলাকা। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে বেসরকারি এ উদ্যোগ সফল করতে মৎস্য বিভাগ থেকে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলে ও ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে যাতে ব্যবসা করতে পারেন, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
"