আকবর হোসেন, মধুপুর (টাঙ্গাইল)

  ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

ময়মনসিংহের মধুপুর

টাকা দিলেই মেলে পল্লী বিদ্যুতের সেবা

অনুমোদনহীন লাইন নির্মাণ, এক জায়গার সেচ মিটার অন্যত্র লাগানো, ট্রান্সফরমার পুড়ে গেলে বিশেষ খরচায় দ্রুত ব্যবস্থা করা, টাকা দিলে মিলে না এমন কোনো কাজ নেই। লাইসেন্সধারী ওয়ারিং ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ-কর্ম স্থগিতাদেশ থাকলেও বিশেষ শর্তে ওয়ারিং করার মৌখিক অনুমতি দেওয়ার পরেও আবার কাজ থেকে সরিয়ে নেওয়াসহ রয়েছে নানা অভিযোগ ওঠেছে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধুপুর জোনাল অফিসের।

ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ উঠেছে, লাইনম্যান ও কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধুপুর জোনাল অফিসে কোনো সেবা নিতে গেলেই গুনতে হয় টাকা। টাকা দিলেই মিলে পল্লী বিদ্যুতের যত সেবা। টাকা পেলে কোন নিয়মের তোয়াক্কা করে না। আর টাকা না দিলে হতে হয় নানা হয়রানির শিকার।

জানা গেছে, উপজেলার মির্জাবাড়ি গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া বিদ্যুতের একটি সংযোগ নিতে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সম্প্রতি সংযোগ নিয়েছেন। ভবানী টেকি গ্রামের গ্রাহক আব্দুল হালিম সরকার একটি সেচ সংযোগ নিয়েছেন যার মিটার নম্বর ১৮১০৪৪৫ (আরইবি ১০৩৪৩১৬৯৬)। কিন্তু মিটারটি চলছে অন্য ইউনিয়নের ভুটিয়া এলাকার জিগাতলা গ্রামে।

আরো জানা গেছে, দায়িত্বশীল এক ব্যাক্তি একটি চক্রের সদস্যদের দিয়ে টাকা নিয়ে এমন অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতা হালিম সরকার টাকা দিয়ে কাজটি করার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রভাব খাটিয়ে কাজটি করে নিয়েছেন বলে মন্তব্য তার।

টেকিপাড়া এলাকার গ্রাহক আনোয়ার হোসেন জানান, একটি মিটারের জন্য লাইনম্যানের মাধ্যমে অফিসে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তিনি। মিটারসহ সংযোগও পেয়েছিলেন। কিন্ত অভিযানের সময় কাগজপত্র না দেখাতে পারায় তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন মিনহাজ উদ্দিন ও আশরাফুল নামে ভুক্তোভোগী দুই ব্যক্তি। তাদের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সেচ ও শিল্প শ্রেণির প্রতিটি সংযোগের ট্রান্সফরমার জন্য গ্রাহক প্রতি ২০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করা হয়। তা না হলে তিনি গ্রাহককে অফিসিয়াল সুবিধা না দিয়ে ট্রান্সফরমার বাইরে থেকে ক্রয় করান। আবাসিক গ্রাহকের আবেদন প্রতি ২০০ টাকা না দিলে আবেদন বাতিল করে দেন। আবেদন জমা নেয়ার পর জমির পরচা ঠিক নেই বলে বাতিল করা আবেদন পরে টাকা দিলে বৈধ হওয়ার ঘটনাও বহু ঘটেছে। মিনহাজ উদ্দিনের অভিযোগ, এজিএম তার সিন্ডিকেটের দালাল দিয়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার ডিসি করান পরে ডিসি আরসি করিয় সংযোগ দিয়ে তার ফি অফিসে জমা না দিয়ে ভাগবাটোয়া করেন।

একাধিক অভিযোগে লাইসেন্স স্থগিত হওয়া ইলেকট্রিশিয়ান আশরাফুল জানান, প্রতিপক্ষের অভিযোগে ও অফিসিয়াল একজনের বিরাগভাজনে সাজানো অভিযোগে তার লাইসেন্স স্থগিত হয়। এজিএম মুশফিকুর রহমান তার স্থগিত আদেশ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ২০ হাজার টাকা দিয়ে এপ্রিল-মে মাসে কাজের সুযোগ পেলেও আবার কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই মাসে ৩০-৩৫টি মিটারসহ ওয়ারিংয়ের কাজ করেছেন তিনি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এজিএম মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ সঠিক নয়। তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করেন কারা সুবিধা নিয়েছে।’

পল্লী বিদ্যুৎ এর ডিজিএম নুরুল আমিনের ভাষ্যমতে, দাপ্তরিক অনুমতি ছাড়া এক স্থানের মিটার অন্য স্থানে ব্যবহার করা যায় না। লাইসেন্সধারী ইলেকট্রিশিয়ানের লাইসেন্স স্থগিত হলে তার কাজ করার সুযোগ নেই। টাকা নিয়ে সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম শহীদ উদ্দিন জানান, অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করতে গেলে অভিযোগকারীরা প্রমাণ হাজির করতে পারে না। ফলে অভিযোগ প্রমাণ করা যায় না। সম্প্রতি একটি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, একজন কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close