মামুন হোসাইন, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর)

  ১১ জানুয়ারি, ২০২৫

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ

নিষিদ্ধ ট্রাক্টরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও ফসলি জমি, ঘটছে দুর্ঘটনা

উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ অবৈধ ট্রাক্টর বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে অবাধে চলাচল * লাইসেন্স কিংবা সিগনাল লাইট ও হর্ন ছাড়াই এগুলো রাস্তায় চলাচল করছে ট্রলি ও ট্রাক্টর * কৃষি জমি বাঁচাতে হলে ট্রাক্টর বন্ধ করা জরুরি বলে দাবি

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে নিষিদ্ধ ট্রলি ও ট্রাক্টর। লাইসেন্স, সিগনাল লাইট ও হর্ন ছাড়াই এগুলো রাস্তায় চলাচল করছে। এ সুযোগে অনেক অদক্ষ ও কিশোর বয়সের ছেলেরা চালাচ্ছে এসব গাড়ি। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাসহ রাস্তায় যানজট, কালো ধোঁয়া ও শব্দদূষণ হচ্ছে। এসব যানবাহনের কারণে গ্রামগঞ্জের কাঁচা-পাকা রাস্তা নষ্ট হচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার ছোটবড় সব সড়কে সকাল থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত বেপরোয়াভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। ট্রাক্টর চলাচলের কারণে বছর না ঘুরতেই পাকা রাস্তাগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে যানজটের পাশাপাশি প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রাক্টর শুধুমাত্র চাষাবাদের জন্য বৈধ থাকলেও এখন অবৈধভাবে পণ্য পরিবহন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বল্প খরচে ভারী কাজ করানোর জন্য মাটি খেকোরা এসব যান ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ফসলি জমির মাটি নিয়ে আসার কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ রয়েছে, কৃষি জমির মাটি ক্রয়-বিক্রয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র জড়িত। কৃষি জমির মাটি কেটে ফসল উৎপাদন হুমকির মুখে ফেলতেও কোনো দ্বিধা করছেন না এই চক্র। অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি বিক্রি এবং জমির বিক্রিত মাটি তুলে আনতে গিয়ে ট্রাক্টর পাশের জমিগুলোরও বেহাল হয়ে পড়ছে। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা না থাকায় উপজেলায় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা চলছে এ অবৈধ পরিবহন। এসবের বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব পরিবহনের বিকট শব্দের কারণে ঘটছে শব্দদূষণও।

আরো জানা গেছে, এসব যান তৈরি হয় মূলত হালচাষের জন্য। দেশে অসাধু লোকজন হালচাষের ট্রাক্টরে বডি লাগিয়ে পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ বাংলাদেশ মোটরযান আইনে পাকা রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের তালিকায় এসব পরিবহনের কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকার শুধু কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য এসব যান আমদানির অনুমতি দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বিভিন্ন ইটভাটার মালিক এবং মাটি ও বালু বিক্রয়ের সিন্ডিকেটরা হাল চাষের ট্রাক্টরগুলোতে অবৈধ ট্রলি লাগিয়ে সড়কের ওপর ছেড়ে দেয়। তাদের ইট, বালু ও মাটি পরিবহন করে এ ট্রাক্টরে।

সূত্রে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ অবৈধ ট্রাক্টর বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে অবাধে চলাচল করছে। সড়কে চলাচলের অনুপযোগী এসব পরিবহনের কারণে কমছে রাস্তার স্থায়িত্ব। অপরদিকে সামান্য বৃষ্টি হলেই ট্রাক্টর থেকে পড়ে যাওয়া মাটি পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটা ঘটছে। বালু পরিবহনের সময় ওপর দিকটা খোলা থাকায় বালু উড়ে এসে পথচারীদের চোখে পড়ে সমস্যার সৃষ্টি করছে।

এদিকে ২০১৭ সালে চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার শামচ্ছুন্নাহার প্রায় ২ বছর ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ রাখেন। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার বদলী হওয়ার পরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পুনরায় চলছে উপজেলা সহ চাঁদপুর জেলায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, এসব পরিবহন বেপরোয়া চলাচলের কারণে রাস্তায় প্রচণ্ড ধুলাবালি ওড়ে। স্কুলগামী শিশুসহ বয়স্ক মানুষের নিউমোনিয়াসহ শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশি আশঙ্কা থাকে।

পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম গাজী ও সাখাওয়াত হোসেন জানান, এইসব ট্রাক্টরের চলাচলে আমরা খুব অসুবিধায় আছি। ট্রাক্টরের বিকট শব্দে চলাচলের ফলে রাতেও ঘুমাতে কষ্ট হয়। আমাদের কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমি বাঁচাতে হলে ট্রাক্টর বন্ধ করা জরুরি। আমরা চাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এগুলো বন্ধ হোক।

এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা রাজিয়া বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) দুই জনেই সংবাদ পেলে ব্যবস্থা নেবার চেষ্টা করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close