কনক দেব, শিবগঞ্জ (বগুড়া)
বগুড়ার শিবগঞ্জ
গ্রাম্য মাতব্বর বন্দি এখন বাঁশের খাঁচায়
![](/assets/news_photos/2025/01/10/image-493707.jpg)
গ্রামে বিচার-সালিস করে বেড়াতেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (৭৫)। টিনশেড বাড়িসহ ১০ বিঘা কৃষিজমির মালিক তিনি। আড়াই বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারান। চিকিৎসায়ও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি। চার ছেলের মধ্যে কাজের সুবাদে তিনজন বাড়িতে থাকেন না। এ অবস্থায় বাড়ির সামনে আট মাস ধরে বাঁশের খাঁচায় বন্দী করে রাখা হয় তাকে। মোহাম্মদ আলী বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা।
গ্রামবাসীরা জানান, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ একসময় কৃষিকাজের পাশাপাশি সার ও খৈলের দোকান চালাতেন মহাস্থান বন্দরে। চার ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বড় ছেলে মাসুম বিল্লাহ মেডিকেল সহকারী পাস করে শিবগঞ্জ পৌর শহরে নিজস্ব ক্লিনিক পরিচালনা করেন। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকেন। দ্বিতীয় ছেলে মাসুদ রানা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে থাকেন শিবগঞ্জ পৌর শহরে। তৃতীয় ছেলে মামুন বাড়িতে থেকে বড় ভাইয়ের ক্লিনিকে চাকরি করেন। ছোট ছেলে জাকি চাকরির সুবাদে থাকেন ঢাকায়। বাড়িতে তার বৃদ্ধ স্ত্রী নুরজাহান বেগমও থাকেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিতীয় ছেলে মাসুদ রানা তার বাবাকে বাঁশের খাঁচা থেকে বের করছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বাবাকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই। কর্মব্যস্ততার কারণে বাড়িতে নিয়মিত আসতে পারি না। মাঝেমধ্যে বিকেলে গিয়ে বাবাকে খাঁচা থেকে বের করে বাইরে হাঁটতে নিয়ে যাই।’
মাসুদ রানা আরও বলেন, আমাদের সাধ্যমতো বগুড়া ও ঢাকায় চিকিৎসা করানোর পরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি বাবা। চিকিৎসক বলেছেন, ব্রেনে সমস্যা। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে রাখা যায় না। চার ভাইয়ের কেউ না থাকায় আট মাস ধরে এভাবে বাঁশের খাঁচায় আটকে রাখা হয়।
গ্রামের বাসিন্দা ইনছার আলী, বিপ্লব ও সুজন মিয়া, রুহুল বলেন, সকালে এই বৃদ্ধকে বাড়ি থেকে বের করে এনে বাঁশের খাঁচায় বন্দী করে রাখে পরিবারের লোকজন। এখানে থাকেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে যায় খাঁচার মধ্যে। রাতে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। খাঁচার ভেতর থেকে লোকজন দেখলে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বিড়বিড় করে কথা বলেন। হাতের ইশারায় কাছে ডাকেন। কাছে গেলে ইশারা-ইঙ্গিতে তাকে বন্দিদশা থেকে বের করতে বলেন। কিন্তু গ্রামের লোকজন তাতে গুরুত্ব দেন না।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বড় ছেলে মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমি ক্লিনিক পরিচালনা করি। সে কারণে বাড়িতে থাকতে পারি না। বাবাকে সুস্থ করতে চিকিৎসা করিয়েছি সাধ্যমতো। তিনি বলেন,আমি নিজেই চিকিৎসা সহকারী। বাবার ভালো-মন্দ বুঝি।
উপজেলার রায়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একজন। তার ছেলেরা শিক্ষিত। জিন্নাহকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমি তার ছেলেকে বলেছি তাকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
"