সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি

  ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫

নীলফামারীর সৈয়দপুর

রেললাইনের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর ফের দখল

সৈয়দপুর রেললাইনের পাশে অবৈধ স্থাপনা গত শনিবার উচ্ছেদ করা হলেও কয়েক ঘণ্টা পরই ফের দখল করে নেন অস্থায়ী দোকানিরা। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টায় উচ্ছেদের পর মাত্র ৪-৫ ঘণ্টার ব্যবধানে তা আবারও দখলে নেন তারা।

মাঝেমধ্যে অর্থ সংকট দেখা দিলে পকেট ভারী করতেই রেললাইন সংলগ্ন অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় বলে অভিযোগ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে বলা হয়, ৪ জানুয়ারি রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ১ নম্বর রেলক্রসিং থেকে ২ নম্বর রেলক্রসিং পর্যন্ত রেল লাইনের দুধারে গড়ে ওঠা প্রায় দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সৈয়দপুরের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধার নেতৃত্বে রেলওয়ে থানা পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করে। কিন্তু এ অভিযানের ৪-৫ ঘণ্টার পর উচ্ছেদ করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরোনো চিত্রে রূপ নেয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উচ্ছেদের মাত্র ৪-৫ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ জায়গায় অস্থায়ী দোকান বসিয়ে ফের ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। রেললাইনের দুইপাশ আগের সেই অবস্থাতেই ফিরে গেছে। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে চলছে একাধিক ট্রেন। আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী, রেলওয়ে অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রেল পুলিশের কারণেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। দুই নম্বর রেলক্রসিং এলাকা থেকে ফলের দোকান ও শীতবস্ত্রের দোকানসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। কিন্তু রেল কর্মকর্তা সুলতান মৃধা চলে যাওয়ার পর পরই আবার ওই স্থান দখল হওয়া শুরু হয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখানকার কয়েকজন নেতা, রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রেলওয়ে থানা পুলিশকে নিয়মিত টাকা দিতে হয়েছিল। কারণ আমরা গরিব মানুষ। দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করার সামর্থ্য নেই আমার। এ কারণে তাদের মাসিক কিছু দিয়ে রেললাইন সংলগ্ন ব্যবসা করেছি। কয়েক দিন আগে এই এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি টাকা দাবি করেন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কয়েকজন রেল পুলিশ। তাদের দাবি অর্থ দিতে না পারায় আমাদের দোকানপাট গুড়িয়ে দেওয়া হয়।

রেলওয়ে বিভাগের এক নেতা বলেন, সারা সৈয়দপুরে রয়েছে রেলওয়ের প্রায় সাড়ে ৮০০ একর সম্পত্তি। এরমধ্যে গরিবের চেয়ে বড়লোকরাই বেশি রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখল করে ঘরবাড়ি ও মার্কেট নির্মাণ করে আছেন। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নেন না। কারণ অর্থ বাণিজ্য। গরিবরা তাদের দাবি অর্থ দিতে পারে না বলেই বার বার উচ্ছেদ করা হয়। তাছাড়া সামনের মার্চ মাসে রমজান ও পবিত্র ঈদে টাকার দরকার আছে বলেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে বলে জানান তিনি। রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান বলেন, রেলপথ বিভাগের মনোভাবের কারণে রেললাইন সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন অনেকেই এবং ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন।

সৈয়দপুরের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতান মৃধা বলেন, রেললাইন সংলগ্ন আরো ২টি রেললাইন বসানো হবে। এ কারণে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিন্তু অবৈধ ব্যবসায়ীরা মারমুখী হয়ে উচ্ছেদে বাধা দেয়। এর পরও অভিযান অব্যাহত থাকবে। ওপর মহলের নির্দেশ পেলে আগামীতে রেললাইন সংলগ্ন অবৈধভাবে কোনো দোকানপাটই নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close