আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আমতলীর রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি ভবন মাঠের মাটি ঠিকদারের কাছে বিক্রি
প্রধান শিক্ষককে শোকজ
বরগুনার আমতলী উপজেলার রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের মাটি কেটে নির্মাণাধীন ভবনের ভিটি ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছে বিদ্যালয়ের প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী। বন্ধ রয়েছে তাদের খেলাধুলাও। টাকার বিনিময়ে মাঠের মাটি ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেছেন বলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় তাকে কারণ দর্শানো হয়েছে।
এদিকে কার্যাদাশের কাজের ঠিকাদারির হাত বদলও হয়েছে একবার। পরে এক দফা সময় সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি ভবনের কয়েকটি পিলার নির্মাণ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি ঠিকাদার। কিন্তু এরই মধ্যে কাজের অর্ধেক টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি।
রায়বালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। বিদ্যালয়ের ৫ কক্ষের দ্বিতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২০২৩ সালের জুলাইয়ে দরপত্র আহ্বান করে আমতলী এলজিইডি। এর ঠিকাদারি পান মো. আবুল কালাম মিলনের মালিকানাধীন মেসার্স তানহা এন্টার প্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিনি তিনি বিক্রি করে দেন স্থানীয় ঠিকাদার অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলামের কাছে।
২০২৩ সালের ১ অক্টাবর কার্যদেশ দেওয়া ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ৯৯ লক্ষ ৫১ হাজার ২৫৩ টাকা। ২০২৪ সালের ১ জুলাই কাজটি শেষ করার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ায় এলজিইডি। কিন্তু বাড়তি ওই সময়ের মধ্যে ভবনের কয়েকটি পিলার নির্মাণ ছাড়া আর কিছুই করেনি ঠিকাদার। তবে এর মধ্যে ঠিকাদার ৫০ লাখ ৬৪ হাজার ৭০০ টাকা বিল তুলে নিয়েছেন।
পিলার নির্মাণের পর উপঠিকাদার মো. নুরুল ইসলাম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনা বেগমকে ম্যানেজ করে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় মাঠের একপাশে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্তের জায়গায় ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নির্মাণাধীন ভবনের ভিটি ভরাট করেন।
এখন মাঠে মধ্যে পুকুর সাদৃশ তৈরি হওয়ায় বিদ্যালয়ের পৌনে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। খেলাধুলা ও চলাচল করতে গিয়ে যে কোনো সময় শিক্ষার্থীরা গর্তে পড়ে বড় ধরনের ক্ষতি পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবক মো. হাসান মৃধা অভিযোগ করেন, ‘এভাবে স্কুলের মাঠের মাটি কাটায় শিক্ষার্থীদের এখন খেলাধুলা বন্ধ রয়েছে। আমাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় লাগে, কখন গর্তে পরে আহত বা বড় কিছু ঘটে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলের মাঠের মাটি কেটে ভিটি ভরাট করায় তারা এখন মাঠে খেলাধুলা করতে পারে না। আবার ভয়ের মধ্যে থাকে, কখন পা পিছলে গর্তে পড়ে ব্যাথা পায়।
বিদ্যালয়ের জমিদাতা মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারকে স্কুলের মাঠের মাটি কেটে ভবনের ভিটি ভরাটের অনুমতি দিয়েছেন। মাঠের মাটি কেটে ভিটি ভরাট করায় শিক্ষার্থীদের জীবন এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কোনো শিক্ষার্থী যদি এই গর্তে পড়ে ক্ষতি হয় তাহলে এর জন্য প্রধান শিক্ষক দায়ী থাকবেন।’
জানতে চাইলে টাকা নিয়ে স্কুলের মাঠের মাটি কাটতে দেওয়ার অনুমতির কথা অস্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক শাহিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘ভবনের ভিটি ভরাটের জন্য কোথাও মাটি না পাওয়ায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার স্কুল মাঠের মাটি কেটে ভবনের ভিটি করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে মাটি কাটা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম বলেন, ‘স্কুল মাঠের মাটি কাটার অনুমতি দেওয়ায় প্রধান শিক্ষকে কারনণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এলজিইডির আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘দ্রুত ভবন নির্মানের জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
"