রবিউল ইসলাম, টঙ্গী (গাজীপুর)
গাজীপুরের টঙ্গী
বিএনপি নেতাকে সালাম না দেওয়ায় যুবককে মারধর থানায় গিয়ে উল্টো গ্রেপ্তার
গাজীপুরের টঙ্গীতে এক ওয়ার্ড বিএনপি নেতাকে সালাম না দেওয়ায় মুন্না খান নামে এক যুবককে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের শিকার যুবক টঙ্গী পশ্চিম থানায় অভিযোগ করতে গেলে উল্টো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনার মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পুলিশ।
গত সোমবার রাতে টঙ্গীর সাতাইশ চৌরাস্তা এলাকায় মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে রাতে জানাতে গেলে মুন্নাকে প্রথমে আটক করা হয়। পরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তী সময় দায়ের করা একটি মামলার অজ্ঞাত আসামির তালিকায় তার নাম যুক্ত করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মারধরের শিকার যুবক মুন্না খান টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন সাতাইশ চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা। অভিযুক্ত বিএনপির নেতা সাত্তার হোসেন টঙ্গী পশ্চিম থানার ৫১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।
জানা গেছে, টঙ্গীর সাতাইশ চৌরাস্তা এলাকায় মারধরের পর আহত অবস্থা মুন্নাকে উদ্ধার করে তার পরিবার। মারধরের কারণ জানতে চাইলে ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সাত্তার হোসেনের লোকজন মুন্নার বাবা-মার গায়েও হাত তুলো। পরে ছেলেসহ থানায় আসেন তারা। এ সময় উপস্থিত সংবাদকর্মীদের সামনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসকান্দার হাবিব তাকে চিকিৎসা শেষে লিখিত অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে রাতে মুন্নাকে আটক ও গতকাল সকালে গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান করা হয়।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওসির পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাত ১০টার দিকে আবার থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে লিখিত অভিযোগ নিয়ে যায় মুন্না ও তার পরিবার। এ সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে অবস্থান করছিল ছিলেন। অভিযোগ দেওয়ার সময় ভুক্তভোগী যুবককে ওসির কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ওসিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তোলা মুন্নার কিছু ছবি প্রদর্শন করে উচ্চবাচ্য করে তেড়ে আসেন অভিযুক্তরা। এ ঘটনা চলাকালে থানার ওসি ভূমিকা ছিল ‘নীরব-দর্শক’।
ভুক্তভোগী মুন্নার দাবি, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ডেকে নিয়ে সালাম না দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেন বিএনপি নেতা সাত্তার হোসেন। একপর্যায়ে তাকে চড়-থাপ্পড় মারা শুরু করে, পরে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে দেয়।
মুন্নার মা মিনারা বেগম বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সাত্তার আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে নিছক কারণেই এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে মারধরের কারণ জানতে চাইলে সাত্তারের হুকুমে খোকন, জিলনসহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন আমাকে ও আমার স্বামীকেও মারধর করেছে। পরে আমরা টঙ্গী পশ্চিম থানায় অভিযোগ করতে আসার পর পুলিশ আমার ছেলেকেই রাজনৈতিক মামলায় আটক করে। কিন্তু আমার ছেলে রাজনীতি করে না, আর তার কোনো পদপদবি নাই। আমি পুলিশ আর বিএনপি নেতার বিচার চাই।’
অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপি নেতা সাত্তার হোসেন বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মুন্না থানায় যাওয়ার পরে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
পুলিশের ভূমিকা বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইসকান্দার হাবিবুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপি নেতা সাত্তার হোসেনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাশকতার মামলায় আসামি হিসেবে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
"