চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আল্টিমেটামেও রেলের জমি ছাড়ছেন না দখলদাররা

* রেলের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়ি-বাণিজ্যিক ভবন * ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দখল না ছাড়লে উচ্ছেদ অভিযান

রেল মন্ত্রণালয় থেকে আল্টিমেটাম দেওয়ার পরও চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেলওয়ের দখল করা জমি ছাড়ছেন না দখলদাররা। গতকাল মঙ্গলবার আল্টিমেটামের শেষ দিন। অথচ এখন পর্যন্ত বিন্দুমাত্র জমিও দখলমুক্ত হয়নি। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তাদের মদদেই বছরের পর বছর দখলদাররা জমি দখলে রাখছেন। আর এ জন্য কর্মকর্তাদের দিতে হয় উৎকোচ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সরকার বাংলাদেশ রেলওয়ের অবৈধভাবে দখল করা ভূমি দখলমুক্ত করার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমিতে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অবৈধভাবে নির্মিত সব স্থাপনা/অবকাঠামো ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজ উদ্যোগে অপসারণ করতে হবে। কিন্তু এর মধ্যে তিনদিন পার হয়ে গেলেও এখনো অবৈধ দখল করা কোন জমি থেকে স্থাপনা অপসারণ করা হয়নি।

রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেলওয়ের জমি আছে ১২০ দশমিক ৬৩ একর। এর মধ্যে রেলের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় মাত্র ৪৫ দশমিক ৭২ একর জমি। বাকি জমিগুলোর নামমাত্র লিজ বা বেদখল হয়ে আছে। ভূসম্পত্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী রেলের প্রয়োজনে ব্যবহৃত জমির বাইরে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে দশমিক ৭৫ একর, কৃষিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ৩৭ দশমিক ৯০ একর, জলাশয় রয়েছে ৩ দশমিক ২০ একর, পতিত ২৬ দশমিক ৯৮ এবং অপদখলীয় ৬ দশমিক ০৮ একর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতিত জমিগুলো এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়ের জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করেছেন দখলদাররা। এসব পাকা ভবন বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও পাকা বাড়ি করে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি জমি দখল রয়েছে গোমস্তাপুরের রহনপুরে। রহনপুরের দখলদাররা এতটাই প্রভাবশালী, রেলওয়ের কর্মকর্তারা সেখানে কোনো অভিযান চালাতেও পারেন না। কোনো অভিযান চালানো হলেও কিছুদিনের মধ্যেই আবারও দখল হয়ে যায়।

সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর অভিযান চালানো হয় রহনপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। কিন্তু দখলদারদের বাধার মুখে শেষ পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান স্থগিত করতে বাধ্য হন রেলওয়ের কর্মকর্তরা। তার আগেও দুই দফা রেল কর্তৃপক্ষ রহনপুরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গিয়েও বাধার মুখে ফিরে যান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ওইদিন সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলেও বিকেলে তারা বাধার মুখে পড়েন। এ সময় বেশকিছু দোকানপাট উচ্ছেদ করে পশ্চিম রেলের পাকশী বিভাগীয় ভূসম্পত্তি বিভাগ। সেদিন বিকেলে স্থানীয় দোকানদার ও ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া শুরু হলে র‌্যাব ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু সদস্য রেল কর্তৃপক্ষকে উচ্ছেদে সহায়তা করায় অবৈধ দখলদাররা তাদের ওপরও হামলা চালায় বলে জানিয়েছিলেন এ ঘটনায় আহত ছাত্ররা। এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগও করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রহনপুর স্টেশন এলাকার এক দখলদার জানান, নিয়মিত উৎকোচ নিয়ে যান কর্মকর্তারা। দিন দিন তাদের উৎকোচের পরিমাণও বাড়ছে। যেহেতু নিয়মিত টাকা দিতে হয় তাই আমাদের উচ্ছেদ করে না।

রহনপুর রেলবন্দর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক নাজমুল হুদা খান রুবেল বলেন, রহনপুর স্টেশনের আশেপাশে রেলওয়ের ৩০০ বিঘার বেশি জমি আছে। অথচ জায়গার অভাবে আমাদের এখানে রেলবন্দর করা যায়নি। মাঝেমধ্যে রেলের কর্মকর্তারা উচ্ছেদের নামে প্রহসন করেন। পরে আবারও তা দখল হয়ে যায়। তিনি বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবারও দখল হয়ে যায়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ও সদর উপজেলার আমনুরা এলাকাতেও রয়েছে রেলওয়ের অপদখলীয় জমি। এসব জমি জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের দখলে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব জমি দখলে রাখার জন্য রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়মিত উৎকোচ দিতে হয়। আর এ কারণেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো আগ্রহ দেখান না তারা। আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না দখলদারদের বিরুদ্ধে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে নামমাত্র অভিযান চালানো হয়। অভিযানের পর জমি দখলমুক্ত রাখতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের কানুনগো মনোয়ার হোসেন বলেন, উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। আমরা চেষ্টা করি দখলমুক্ত করতে। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয় না।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, যেহেতু মন্ত্রণালয় থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে, সেহেতু ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি। এ সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা না হলে আমরা উচ্ছেদ অভিযানে যাব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close