জুলফিকার আমীন সোহেল, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর)
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া
প্রভাবশালীদের দখলে খাল, পানি প্রবাহে বাধায় ক্ষতির মুখে চাষিরা
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় দীর্ঘ বছর ধরে প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে খাল ও বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি। এতে খাল সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা। সর্বশেষ দেশের দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে বিক্ষুব্ধ কৃষক ও জনতা পৌরশহরের দক্ষিণ বন্দর স্লুইসগেট ও বেতমোর ইউনিয়নের কালিরহাট বাজার সংলগ্ন বাঁধ কেটে দেন। উপজেলা প্রশাসন বারবার অবৈধ উচ্ছেদ কর্যক্রম পরিচালনা শুরু করলেও প্রভাবশালীরা মামলা করে তা থামিয়ে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঠবাড়িয়া প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মধ্যে বহেরাতলা এলাকায়, দক্ষিণ বন্দর স্লুইসগেট-পিয়াজ হাটা, হাসপাতাল সম্মুখ খালে ১ কিলোমিটার, দক্ষিণ বন্দর স্লুইসগেট-আন্দারমানিক দেড় কিলোমিটার, মঠবাড়িয়া-গুলিশাখালী, মঠবাড়িয়া-সাপলেজা সড়কের খালেরপাড়ে সহস্রাধিক পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
এদিকে উপজেলার সাপলেজা বাজারের পশ্চিম অংশে আলিশ্যার মোড় এলাকায় খাল দখল করে শতাধিক পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে সাপলেজা ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারে, মিরুখালী, বড় মাছুয়া, তুষখালী ইউনিয়নের জানখালী বাজার, গুদিঘাটা বাজার, হলতা গুলিশাখালী, আলগী পাতাকাটা বাজারসহ উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় খালের দুপাশ দখল করে প্রভাবশালীরা কাঁচা-পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালীরা খালের পাড় দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িসহ নানা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন এবং অব্যাহত রাখছে। অপরদিকে খালের দুই তীর সংশ্লিষ্ট জনবসতির ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্যসহ অসংখ্য বাসাবাড়ির শৌচাগারের পাইপ সংযোগ থাকায় খালের পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। প্রভাবশালীরা যেন দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে।
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলী হায়দার বলেন, বহেরাতলা তিন খালের মোহনা ভূমিদস্যুরা যেভাবে খাল ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে এতে মনে হচ্ছে এদের বাপদাদার সম্পত্তি। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে এখানে খাল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কলামিস্ট নূর হোসাইন মোল্লা, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে প্রশাসনের জোরালো হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতেরও উচিত বাদীর বক্তব্য শুনেই নিষেধাজ্ঞা না দেওয়া। আদালতের প্রতি বিনয়ের সঙ্গে আবেদন রইল, তদন্ত করে বাদীর আবেদন মঞ্জুর করুন।
মঠবাড়িয়া ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা মো. সোহেল আহম্মেদ বলেন, অবৈধ দখলদারদের কারণে পানি সরবরাহ করতে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। যে কারণে আগুন লাগলেও পানি সংগ্রহে দেরি হওয়ার কারণে অনেক সময়ই অনাকাঙ্ক্ষি ক্ষতি হয়ে যায়।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক আবদুল কাইয়ূম প্রভাবশালীদের কিছু মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অবৈধ উচ্ছেদ কর্যক্রম শুরু করলে ভুক্তভোগীরা কিছুদিনের সময় নিয়েছে। তবে আমাদের উচ্ছেদ কর্যক্রম চলমান থাকবে।
"