ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
ঢাকার ধামরাই
ইটভাটায় কমছে ফসলি জমি, হুমকিতে পরিবেশ
ঢাকার ধামরাইয়ে নিয়ম না মেনে যত্রতত্র ফসলি জমিতে অবৈধ ইটভাটা গড়ে তুলেছে প্রভাবশালীরা। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে প্রায় ২১৬টি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার কৃষিজমি, গাছপালা ও পরিবেশ। ইটভাটার অব্যাহত বায়ুদূষণের কারণে উপজেলা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইটভাটায় ফলদ ও বনজ কাঠ পোড়ানোর মহাউৎসবে মেতে উঠেছে। ফলে এই ইটভাটার কারণে দিন দিন ফসলের ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করেছে। কারণ পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে পরিবেশ অধিদপÍরের অনুমোদন ছাড়াই ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা স্থাপন হলেও এগুলো বন্ধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই।
সরেজমিনে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধামরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় ২১৬টি ইটভাটা তিন ফসলি জমি দখল করে গড়ে তুলেছেন কাগজপত্রহীন অবৈধ ইটভাটা। উপজেলার তিন ফসলি কৃষিজমিতে একের পর এক ইটভাটা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে এসব ভাটায়। যার কারণে ট্রাকে করে মাটি ও ইট পরিবহনের কারণে ভেঙে পড়েছে ইউনিয়নের অনেক রাস্তাঘাট। এছাড়া ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আশপাশের বাড়িঘর। যার কারণে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কৃষিজমি এবং ভাটার ধোঁয়ার কারণে ফল হচ্ছে না কোনো গাছে।
কৃষিজমিতে ভাটা স্থাপনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কৃষি বিভাগের ছাড়পত্র নিয়ে ভাটা স্থাপনের অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে ভাটা মালিকরা। আবার অধিকাংশ ইটভাটার মালিকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রসাশনকে ম্যানেজ করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ ইটভাটা। আর এই অবৈধ ইটভাটা থেকে টাকার বিনিময়ে বৈধতা দিয়েছে ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির ধামরাই উপজেলার সদস্যরা।
ইটভাটার মালিক সমিতি ভাটাপ্রতি ২৫ হাজার টাকা নিয়ে অনুমতি দেয় বলে জানা গেছে এবং লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার মালিকের কাছ থেকে প্রায় ৫ লাখের বেশি টাকা নিয়ে অনুমতি দেওয়া হয় বলে সূত্র জানায়। ফলে ইটভাটার মালিকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যততত্র গড়ে তুলছে অবৈধ ইটভাটা।
এসব ইটভাটার কারণে আশেপাশের বাড়িঘরে থাকা বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ ও ফসলি জমিতে কোনো ধরনের ফসল ও ফল হচ্ছে না বলে দাবি এলাকাবাসীর এবং মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই জেঁকে বসতে শুরু করেছে বলেও দাবি তাদের। বিভিন্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে ইটভাটা গড়ে ওঠার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের শ্বাসকষ্ট বেশি বলে ধারণা ডাক্তারদের।
এছাড়া রাস্তার পাশ দিয়ে চলাফেরা করা যায় না। কারণ ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়ার কারণে মাটি পড়ে রাস্তায় ধুলা হয়। যার কারণে মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ব্যক্তি ইটভাটা প্রস্তুত করতে পারবে না। ৩ কিলোমিটারের মধ্যে বাড়িঘর ও বসতি এলাকা ফলদ ও বনজ-বাগান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে ইটভাটা অনুমোদন হবে না।
ধামরাইয়ের ইটভাটার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ জানান, উপজেলায় প্রায় ২১৬টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে মাত্র ৭০ থেকে ৯০টির। প্রতিটি ইটভাটায় জমি লেগেছে প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ বিঘা।
ইটভাটার মালিকরা ক্ষমতাশীল হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। প্রশাসনকে জানালে তারা ইটভাটার মালিকদের সঙ্গে মিলে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কিছু না বলে চলে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা সংলগ্ন বাসিন্দারা বলেন, যেসব জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে ধান ও সবজি চাষ হতো। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে আশপাশের সব জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আহম্মেদুল হক তিতাস জানান, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি কাশিসহ ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ভাটার কালো ধোঁয়া শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, ইটভাটার কারণে দিন দিন কমে আসছে জমির পরিমাণ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৬ বছরে ধামরাইয়ে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস পাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, ইটভাটা নিয়ে অভিযান চলবে। বিকল্প হিসেবে ইটভাটার মালিকদের ব্লক ইট তৈরির দিকে উৎসাহ দেব।
"