বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার সাঁথিয়া
উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর যেন ভাগাড় দখল-দূষণে ব্যাহত কার্যক্রম
বৃষ্টি হলেই নোংরা ডোবায় পরিণত হয় পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরো আঙিনা। বাজারের সকল ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের আঙিনায়। আবর্জনায় ভরা দুষিত পানি না মাড়িয়ে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে পারেন না রোগীরা। ওই স্থানে জায়গা দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ দোকান ও বাসস্থান। সীমানায় দেওয়াল না থাকায় ভিতরে ঢুকে প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগ করে থাকেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের নাকে রুমালচাপা দিয়ে ঢুকতে হয়, পোহাতে হয় দুর্ভোগ।
উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরতসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র কাশিনাথপুর বাজারের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে কাশিনাথপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থান। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এখানে প্রতিদিন কয়েকশতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু রোগী ও তাদের স্বজনদের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের আঙিনায় ঢোকা মাত্রই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ৪০ বছরেরও বেশি পুরোনো। এতো বছরে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র সংলগ্ন মহাসড়কসহ চারিদিকের জায়গাগুলো মাটি ভরাটের মাধ্যমে উঁচু করা হয়েছে। কিন্তু এটি মাটি ফেলে উঁচু না করায় সেটি নিচু ডোবার মতো এলাকায় পরিণত হয়েছে। ফেলা হয় বাজারের ময়লা আর্বজনা। এ ছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলেই পাশর্^বর্তী এলাকার যাবতীয় বর্জ্য বৃষ্টির পানির সঙ্গে সেখানে গিয়ে জমা হয়। এ সময় হাঁটু সমান নোংরা ও দুষিত পানিতে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরো আঙিনা সয়লাব হয়ে যায়। রোগীদের সেই নোংরা পানি মাড়িয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনে উঠতে হয়। আবার পানি শুকিয়ে গেলে বৃষ্টির পানির সঙ্গে আসা নোংরা, আবর্জনাসহ নানা রকম বর্জ্য সেখানে জমতে থাকে। এভাবে বছরের পর বছর নোংরা আবর্জনা জমে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের আঙিনা অনেকটা ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টির সময় রোগীদের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের আঙিনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে কিছু বালুর বস্তা ও মাটি ফেলা হয়েছে। এতে কিছুটা উঁচু সরু রাস্তা তৈরি হওয়ায় রোগীরা পানি এড়িয়ে কয়েকদিনের জন্য উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনে ঢুকতে পেরেছেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই কিছু স্থান থেকে মাটি ও বালুর বস্তা সরে গেছে। এতে বৃষ্টি হলে আবারও আগের মতো দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে স্থানীয়রা জানান। এ ছাড়া প্রভাশালী কিছু ব্যাক্তি ওই আঙিনার ভিতরে ঘর তুলে ভাড়া দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোগীদের ব্যাপক ভির। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের আঙিনা অবৈধভাবে দখল করে প্রধান ফটকের কাছে গড়ে ওঠেছে কয়েকটি দোকান। এর থেকে কিছুটা দূরে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের দক্ষিণ দিকে অবৈধভাবে বাড়িঘর তুলে বসবাস করছে ছয়-সাতটি হরিজন (সুইপার) পরিবার। হরিজন পরিবারগুলোর জন্য কিছুদিন আগে আশ্রয়ন প্রকল্পের চারটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা অবৈধ দখল ছেড়ে সেখানে যায়নি। সীমানা দেওয়াল না থাকায় প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার কাশিনাথপুর হাটবার হাটের দিন অনেক মানুষ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আঙিনা মূত্রত্যাগ করে।
চিকিৎসা নিতে আসা টাংবাড়ি গ্রামের মোছা. আলেয়া খাতুন বলেন, ‘এই হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা দেয় দেইখ্যা আইছি। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার পর নোংরা আবর্জনা আর দুর্গন্ধে বমি আসে।’
অবৈধ দখলদারের মধ্যে সাইকেল-রিকশা মেরামতের দোকানদার আকবর আলী বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর ধইর্যা এখানে দোকান কইর্যা আছি। এই জায়গার থ্যা দোকান তুইল্যা দিলি পরিবার নিয়্যা না খায়া মরা লাগবি। এরপরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সত্যিই যদি জায়গা ছাইড়্যা দিব্যার কয়, তবে ছাইড়্যা দেব।’
অবৈধভাবে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করা পরিবারগুলোর একটির প্রধান রনি হরিজন বলেন, ‘এই জায়গায় আমরা ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধইর্যা বাস করি। হাসপাতালের ভিতরে ৭-৮টি পরিবার বসবাস করি। কাশিনাথপুর সদর এলাকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ আমরা করে থাকি। অথচ আমাদের এখান থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে বেশ ভিতরে আশ্রয়ণের দুইতিনটা ঘর দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য আমরা সেখানে যাই নাই। আমাদের এই সদর এলাকার কোনো খাস জায়গা বরাদ্দ দিলে আমরা হাসপাতালের জায়গা ছেড়ে দেব।’
উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক (এমও) ডা. এনামুল হক জানান, এখানে প্রতিদিন প্রায় এক দেড়শ রোগীদের চিকিৎসা দেন তিনি। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গোটা আঙিনা জুড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। এটা যেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নয় পাবলিক টয়লেট। দ্রুত এখান থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে মাটি ভরাটের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সীমানা দেওয়াল নির্মাণ করতে হবে যাতে বহিরাগতরা এখানে ঢুকতে না পারে।
সাঁথিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল বাতেন বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি প্রশাসনের সহযোগিতায় সেগুলো দূর হবে।
"