আব্দুস সালাম বাবু, বগুড়া
বগুড়ায় শীতকালীন সবজি
১৩৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ বাজার ও খেতে ব্যস্ত চাষিরা
শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম এখন, বাজারে সরবরাহও বেশ রয়েছে। একসঙ্গে সবজি উত্তোলন করে হাটবাজারে কেনাবেচা ও খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত শষ্যভান্ডার খ্যাত বগুড়ার চাষীরা। গত বছরের তুলনায় এবার সবজি চাষের জমি বেড়েছে ৩০০ হেক্টর। তবে বীজ ও সারের দাম বেড়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
সারাবছর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকে বগুড়ার কৃষকরা। তবে শীতকালে বেশি সবজি চাষ হয়। এরই মধ্যে আগামজাতের সবজি চাষ করে বেশ ভালো দাম পেয়েছেন চাষীরা। মানসম্মত হওয়ায় গোটা দেশেই রয়েছে বগুড়ার উৎপাদিত সবজির চাহিদা। দাম ভালো থাকায় সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের।
জেলার কৃষিবিভাগ জানিয়েছে, বিভিন্ন ধরনের শাক সহ ৪২ প্রকারের সবজি উৎপাদন করে বগুড়ার চাষীরা। সারাবছর ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এসব সবজি চাষ হয়ে থাকে গোটা জেলায়। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্রতি বছর ৪ লাখ টনের বেশি সবজি উৎপাদন হয় বগুড়ায়। চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এবার সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সোয়া ৩ লাখ টনেরও বেশি। ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শীতকালীন মৌসুম। শিবগঞ্জ, সদর, গাবতলীসহ সব উপজেলায় সবজি চাষ হয়ে থাকে।
জেলার শিবগঞ্জ, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শিশির ভেজা সকাল থেকেই সবজি চাষে ব্যস্ত চাষীরা। কেউ আগাম জাতের সবজি উঠাচ্ছেন, আবার কেউ খেত পরিচর্যা করছেন ভালো ফলনের আশায়। ভালো দাম পাওয়ায় চাষীদের আগ্রহ যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে সবজি চাষের জমি। গত বছরের তুলনায় এবার চাষের জমি বেড়েছে ৩০০ হেক্টর। এরমধ্যেই ফুলকপি, বাধাকপি, পটল, ঢেঁড়শ, সিম, বেগুন, মূলা, লাউ সহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি কেনাবেচায় সরগরম বগুড়ার হাটবাজার।
বিভিন্ন এলাকার চাষীরা জানান, চলতি বছর আগাম সবজি চাষ করে তারা লাভবান হয়েছেন, তবে কীটনাশক, সার বীজের দাম বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ সীমিত হচ্ছে। ভালো ফসলের আশায় তারা ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। সদরের মানিকচক এলাকার ধলু প্রামানিক জানান, এবার ৩০ শতাংশ জমিতে মূলা চাষ করে বেশ ভালো দাম পেয়েছেন। এখন আলু চাষ করছেন, আগাম আলুতেও লাভবান হবে বলে জানান। তবে বীজ সারের দাম বেড়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
গাবতলীর চকবোচাই এলাকার চাষী ফজলুর রহমান জানান, একই জমিতে পটল ও শিম চাষ করেছেন, পটলের ফলন ভালো পেয়েছেন দামও বেশ ভালো। তবে শিমের গাছে রোগ দেখা দেয়ায় পাতা হলুদ হয়েছে, এতে করে ফলন ভালো হবে না বলে জানান।
সদরের লাহিড়ীপাড়া এলাকার চাষী হামিদুল আলম জানান, তারা সবসময় ভালো বীজ ও ভালো চারা রোপন করে থাকেন। এবারো ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা রোপন করেছেন বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন আবার হাটেবাজারে দামও ভালো পেয়েছেন।
গত বুধবার মহাস্থান হাটে প্রতি কেজি ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা পিছ, লাউ প্রতি পিছ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, সিম ৭০ টাকা, মূলা ১৮ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, পটল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পাতা পেয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টি লাউ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজি মহাস্থান থেকে শহরসহ অন্যান্য জেলায় যেতে দাম বাড়ছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান, মান সম্মত বীজ ও চারা ব্যবহার করে কৃষকরা ভালো ফসল উৎপাদন করছে, এতে করে তারা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বগুড়া শীতকালীন সবজির চাষাবাদ চলছে।
"