সালাহউদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
মৌলভীবাজারের জুড়ী
শীতের মধ্যেই জুড়ী নদীতে ঐতিহ্যবাহী পলোবাইচ
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জুড়ী নদীতে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পলোবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে জায়ফরনগর ইউনিয়সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ এতে অবস্থান নেন। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী চলে মাছ শিকার। তবে বেশি পানির কারণে এবার শিকারিরা মাছ অনেকটা কম পেলেও আনন্দের কমতি ছিল না তাদের মাঝে।
গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় উপজেলার জুড়ী নদীর কন্টিনালা অংশে জায়ফরনগর ইউনিয়নের আয়োজনে এ পলো বাওয়া উৎসব হয়। পলো বাওয়া উৎসব উদ্বোধন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা আক্তার ও সদর জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা।
এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আবুল কাশেম, জুড়ী প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য হারিছ মোহাম্মদ, জুড়ী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী ইলিয়াছুর রহমান ময়না প্রমুখ।
জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এতে অংশ নিয়ে পলো বাওয়া উৎসবকে মাতিয়ে তুলেছে কয়েকশ মানুষ। পেশাধার, সৌখিন ও প্রবাসী মাছ শিকারীরা পলো নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন নদীতে। কন্টিনালা সেতু থেকে শুরু করে রাবারড্যাম পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ ধরার মনোরম সে দৃশ্য উপভোগ করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি দুরদুরান্তের দর্শনার্থী ভীড় জমান। উপস্থিত সকলের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, উৎসব ও আমেজের কোন কমতি ছিল না।
জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা বলেন, পলো দিয়ে মাছ ধরা, এ যেন গ্রামবাংলার এক চিরপরিচিত উৎসব। কিন্তু এখন আর এ উৎসবের আমেজ চোখে পড়েনা। এ সময় গ্রামে বিভিন্নভাবে মাছ ধরার ব্যাপারটা ছিল আনন্দের উৎসব। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পলো বাইচ ধরে রাখার জন্য বিগত পাঁচ বছর ধরে জায়ফরনগর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পলো বাইচের আয়োজন করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছরের শীত মৌসুমে জুড়ী নদীতে পানি কমতে শুরু করলে আশপাশের গ্রামবাসীরা পলো দিয়ে মাছ শিকারের দিন নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত দিনে শত শত লোক পলো, জাল, দড়িসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে নদীতে হাজির হন। মাছ শিকার উৎসব উপলক্ষে নদীর দু-পাড়ে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।
জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবুল কাশেম জানান, প্রতিবছর শিকারীরা ঐক্যবদ্ধভাবে দল বেঁধে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নেন। পলো বাওয়া উৎসবের বৈশিষ্ট্যই হলো দল বেঁধে পলো নিয়ে মাছ ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়া। উৎসবের দিন নিজ নিজ পলো, হাতাজাল, উড়াল জালসহ নানা ধরনের মাছ ধরার জিনিসপত্র নিয়ে মাছ শিকারীরা মিলিত হন এই বড়আন বিলে। দেশীয় প্রজাতির শৈল, গজার, বোয়াল, মাগুর মাছসহ নানা প্রজাতরি মাছ ধরা পড়ে পলো বাওয়া উৎসবে।
"