সাহারুল হক সাচ্চু, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ)
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া
মাঠে জলাবদ্ধতার কবলে ২৫০ বিঘা আবাদি জমি
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় নাগরৌহা আবাদী মাঠে জলাবদ্ধতায় প্রায় ২৫০ বিঘা জমিতে সরিষা ফসলের আবাদ করা যাবে না বলে জমি মালিক কৃষকেরা জানান। জমি থেকে যখন পানি শুকাবে তখন সরিষা ফসলের আবাদের সময় পেরিয়ে যাবে। আপাতত পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের কথা ভাবছেন। সব মিলিয়ে ক্ষতির শঙ্কায় কৃষকেরা।
জানা গেছে, উপজেলার পাশাপাশি অবস্থানের ছয়টি মৌজা হলো নাগরৌহা, ভদ্রকোল, বাখুয়া, পংরৌহা, চড়ুইমুড়ী ও ভেংড়ী। এর মধ্যে কয়ড়া ইউনিয়নে একটি চড়ুইমুড়ী ও ভেংড়ী পূর্ণিমাগাতী ইউনিয়নের মধ্যে। আর সদর উল্লাপাড়া ইউনিয়নের মধ্যে বাকী চারটি মৌজা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা জানান, স্বাভাবিক বর্ষা হলেই মৌজাগুলোর বেশির ভাগ আবাদী জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি কচুয়া (বিল সূর্য) নদীর শাখা বুড়ির বিল নালা হয়ে মৌজাগুলোয় ঢোকে। সে পানিতে আবাদী জমি কম বেশি ডুবে যায়। তখন কিছু কিছু জমিতে বোনা আমন ধান ছাড়া ফসল থাকে না। প্রায় দুই যুগ আগে স্থানীয় চরপাড়া এলাকায় একজন ইটভাটা মালিক নিজ উদ্যোগ ও টাকা খরচ করে ভেংড়ী মৌজায় কচুয়া নদী থেকে প্রায় পাঁচশো ফুট দীর্ঘ একটি নালা খনন করেন। তিনি নিজ ইট ভাটা ব্যবসার সুবিধায় জমি ভাড়া (লিজ) নিয়ে নালাটি খনন করেন। সে থেকেই ভেংড়ী নালা হয়ে মৌজাগুলোর আবাদী মাঠের জমি থেকে অতি সহজেই পানি নিষ্কাশন হত। আবার নালা হয়ে বন্যার পানি এলাকায় ঢুকত। এ ছাড়া বুড়ির বিল নালা হয়ে বন্যার পানি ঢুকলেও বের হতে পারে না বলে এলাকার লোকজন জানান। প্রায় চার বছর আগে ভেংড়ী নালাটি জমির মালিক ভরাট করে ফেলেন। আর এতে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নাগরৌহা ও চরপাড়া এলাকার সুলফিগাড়ী মাঠে প্রায় আড়াইশো বিঘা জমিতে বন্যার পানি জমে আছে। জমিগুলো বন্যার পানির জলজ আগাছায় ভরপুর হয়ে আছে। বন্যার পানি এবারে জমি থেকে সহজে শুকাচ্ছে না। আবাদী মাঠের উপরের জমিগুলোয় সরিষা ফসলের আবাদে আগাছা পরিস্কার করা হচ্ছে। এসব জমিতে সরিষা আবাদ নাবী করে হবে। কৃষক চান মিয়া, মোকাব্বর আলী, আ. কুদ্দুস, ছাইদুর রহমান ও আরো কয়েকজন জানান, সুলফিগাড়ী খাপাল মাঠ বলে পরিচিত জমি থেকে যখন পানি শুকাবে তখন সরিষা ফসলের আবাদের সময় পেরিয়ে যাবে। একেবারে নাবী করে আবাদ করা হলে ফলন তেমন হবে না। আর জমিতে বোরো (ইরি) ধান ফসলের আবাদ পিছিয়ে যাবে। সব মিলিয়ে সরিষা ফসলের আবাদ করা সম্ভব হবে না। আগাম করে বোরো ধান আবাদ করা যাবে। কৃষকদের অনেকে বলেন, কচুয়া নদী বন্যার পানি হলে বুড়ির বিল নালা হয়ে বন্যার পানি সহজেই নাগরৌহাসহ আরো কয়েকটি মৌজা এলাকায় ঢুকে পড়ে। তবে বুড়ির বিল নালা কয়েক জায়গায় প্রায় ভরাট হওয়ায় মাঠগুলো থেকে পানি আর বের হতে পারে না। নাগরৌহার সুলফিগাড়ী মাঠের জলাবদ্ধতা কাটাতে মাটির নীচে পাইপ বসিয়ে কচুয়া নদীতে পানি নিষ্কাশন করার বিষয়ে কৃষকদের মত মিলেছে।
বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের উল্লাপাড়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহী আমিন বলেন, সরেজমিনে নাগরৌহা মাঠে গিয়ে সব দেখে মাঠের পানি সহজেই নিষ্কাশন ব্যবস্থায় দরকারী উদ্যোগ নেবেন। তিনি ভুগর্ভে (মাটির নীচে) পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী জানান, জলাবদ্ধতায় সরিষা ফসলের আবাদ করা না গেলে জমির মালিক কৃষকদের লোকসান হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, জলাবদ্ধতার বিষয়ে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
"