শাহ্ আলম খান, চাঁদপুর
চাঁদপুর সদর
সেচে অব্যবস্থায় অনাবাদির শঙ্কায় শত একর বোরো জমি
চাঁদপুর সদরে সেচ প্রকল্পের আওতাধীন একটি গ্রামে সেচ ব্যবস্থাপনায় জটিলতায় প্রায় শত একর জমির বোরো আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের পশ্চিম ব্রাহ্মণ সাখুয়া গ্রামের সেচ প্রকল্প ঠিক সময়ে চালু না হলে এই সমস্যায় পড়বে চাষিরা। বর্ষা মৌসুমের আমন ধানের আবাদ হলেও বর্তমানে বোরো ধান আবাদের প্রস্তুতির জন্য খালি পড়ে আছে জমিগুলো।
কৃষকদের অভিযোগ, গত বছর উপজেলা পরিষদ থেকে ৩০ লাখ টাকার বরাদ্দ এনেও এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেন মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেন স্কিম ম্যানেজার ফজলুর রহমান খান। গত বছর তিনি সেচের পানি বন্ধ করে দেওয়ায় আমন ও বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন করতে পারেননি কৃষকরা। এ বছরও একই পরিস্থিতির শিকার হতে যাচ্ছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর বিকল্প সেচের মাধ্যমে কৃষকরা পানির ব্যবস্থা করতে চাইলে সেখানেও বাঁধার সৃষ্টি করেন সেচ ম্যানেজার ফজলুর খান। এ কারণে পশ্চিম ব্রাহ্মণ সাখুয়া বিলের প্রায় ১০০ একর কৃষি জমির ফসল আবাদ বন্ধ ছিল।
সাখুয়া গ্রামের কৃষক আলমগীর শেখ, হাবিব মাঝি ও মান্নান মুন্সি জানান, দীর্ঘদিন ধরে জমিতে ধান আবাদ করে আসছেন তারা, কিন্তু সেচের পানি নিয়ে স্কিম ম্যানেজারের গাফিলতিতে সবসময়ই বিপাকে পড়তে হয়।
গ্রামের কৃষকরা আরো জানান, তাদের এখানে একটি গ্রামীণ সড়কের কাজ করতে গিয়ে সেচের ড্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই অজুহাতে সেচ ম্যানেজার তাদের পানি দেওয়া থেকে বঞ্চিত করে। অথচ সড়কের কাজ করার সময় সড়ক নির্মাণ কর্তৃপক্ষ ও কৃষকদের আবেদন থাকা সত্ত্বেও তিনি পানি সেচের ড্রেন মেরামত করেননি। এছাড়া পানির পাইপ ও বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা বললেও তিনি রাজি হননি।
কৃষক মান্নান মুন্সি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেন মেরামতের কথা বলে স্কিম ম্যানেজার ফজলুর রহমান গত বছর উপজেলা পরিষদ থেকে ৩০ লাখ টাকার বরাদ্দ আনেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ড্রেন মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ বছর বোরো ধানের আবাদ সামনে রেখে স্কিম ম্যানেজার কৃষি জমি বাদ দিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের ভিটে জমির ওপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করতে যান। এর প্রতিবাদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ করেন।
ইউএনও বরাবর অভিযোগকারী স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশিদ খান ও শামীমা আক্তার বলেন, সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান কৃষিজমি বাদ দিয়ে তাদের ভিটা জমির ওপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করতে চেষ্টা করেন। এজন্য তারা ইউএনও বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও ঘটনাস্থলে একটি প্রতিনিধি দল পাঠালে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন সেচ ম্যানেজার। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে তিনি পালিয়ে যান।
জানতে চাইলে সব অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন সেচ ম্যানেজার ফজলুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘সেচের ড্রেন তো অন্যের জমি দিয়েই গেছে। এখন রাস্তা হয়েছে বিধায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আবার কেউ কেউ সেচটা বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। আমি এখন আর
সেচের কোনো কাজ করতে চাই না। কৃষকরায় সিদ্ধান্ত নিবে কাকে দিয়ে সেচের পানি ব্যবস্থা করবে?’
চাঁদপুর সদর ইউএনও সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ঘটনাস্থল তদন্ত করেছি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। মালিকরা যদি স্বেচ্ছায় জমি না দেন, তাহলে সরকারি কোনো প্রকল্প হবে না। কৃষকের জন্য যেহেতু সেচের প্রয়োজনীয়তা আছে, সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করা হবে যাতে কারো কোনো ক্ষতি না হয় ও সেচের ব্যবস্থাও করা হয়।’
উপজেলা পরিষদ থেকে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘এমন একটি প্রস্তাবনা ছিল, তবে ড্রেন করার মত জায়গা না পাওয়ায় প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়েছে।’
"