হারিছ আহমেদ, কিশোরগঞ্জ
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
হাসপাতালের সরু রাস্তায় যানজট ২ কিমি যেতে দেড় ঘণ্টা পার
কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এখন রোগীদের ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগী। দ্রুত যাওয়ার দরকার হলেও দুই কিলোমিটার রাস্তা যেতে সময় লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। দীর্ঘদিন ধরে দাবি পরও রাস্তাটি সংস্কার ও প্রশস্ত করার কোনো উদ্যোগ নেই।
জেলার প্রায় সব উপজেলার লোকজনকে চিকিৎসা নিতে আসেন ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাসপাতালে। শহর থেকে একটু বাইরে হওয়ায় যাতায়াতের রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের ভোগান্তিতে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও হাসপাতালে আসা রোগীদের স্বজনেরা বলেন, হাসপাতালের রাস্তাটি বেহাল হলেও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে অসংখ্য রোগী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন জেলা শহরে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মূলত রাস্তাটি চাপা হওয়ায় মানুষ এই ভোগান্তির হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, একরামপুর মোড় থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তাটি খানাখন্দ ও ছোট হওয়ার কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। পাকা রাস্তাটির মাঝে মাঝে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের সামনে রাস্তার দুপাশের দোকানের কারণে মানুষ চলাচলের সমস্যা হচ্ছে।
১০ ফুট প্রশস্ত রাস্তাটি দিয়ে যাতায়াত করছে হাজারো মানুষ। রাস্তা জুড়ে খানাখন্দ হলেও হাসপাতালের সামনের অংশ বেশি খারাপ। রোগী নিয়ে দ্রুত যাওয়ার দরকার হলেও দুই কিলোমিটার রাস্তা যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগছে। রাস্তা সরু হওয়ায় সারাদিন জ্যাম লেগেই থাকে। অটোরিকশা ও অ্যাম্বুলেন্স একটা দাঁড়ালে আরেকটা যাওয়ার সুযোগ পায়। দুর্ঘটনাকবলিত রোগীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে গর্ভবতী রোগীদের অনুপযোগী রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করাটা কোনোভাবেই নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে রাস্তাটির শুরুতে রয়েছে একরাম মোড়। সেখানে প্রতিদিন আটকা পড়ে মুমূর্ষু রোগীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
কিশোরগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হাসপাতালের পাশের রাস্তা দিয়ে অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স ও মালবাহী ট্রাক চলাচল করে। জেলার সব উপজেলা থেকে সেবা নিতে আসা রোগীরা একটা মোড় হয়ে হাসাপাতাল ও রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করতে হয়। রাস্তাটি ছোট হওয়ায় গাড়ি দ্রুত চলাচল করতে পারে না, তাই জ্যাম থাকে। এতে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
জেলার নান্দাইল উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা তারিনা আক্তার জ্যোতি বলেন, ‘এই (হাসপাতালের) রাস্তার অবস্থা এত খারাপ যে সুস্থ মানুষও যাতায়াত করতে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেডিকেল কলেজ করেছে সরকার, কিন্তু মানুষের চলাচলের রাস্তা করেছে না কেন? নতুন (অন্তর্বর্তী) সরকারের কাছে রাস্তা সংস্কারে সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালের রাস্তাটি চিকন (সরু) ও জরাজীর্ণ হওয়ায় দুটি গাড়ি একসঙ্গে যাতায়াত করতে পারে না। অনেক সময় একটি গাড়ি দাঁড়ানোর পর আরেকটি ক্রস করতে হয়। রাস্তাটি প্রশস্ত ও সংস্কার করলে রোগীদের স্বস্তি ফিরবে।’
"