গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ
শুঁটকির চাতালে নারীশ্রমিকের মজুরি পুরুষের অর্ধেক
সিরাজগঞ্জের চলনবিল অঞ্চলে শুঁটকি মাছ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকরাই বেশি কাজ করে। তবে প্রতিদিন পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। অথচ নারী শ্রমিকরা পান ২৫০ টাকা মাত্র। এমনই অভিযোগ স্থানীয় নারী শ্রমিকদের।
জানা গেছে, উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর, বড় পাঙ্গাসী, উধুনিয়া ও বাঙ্গালা ইউনিয়ন চলনবিল এলাকায় অবস্থিত। অক্টোবর মাস থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি মাছ উৎপাদনের মৌসুম। এ সময়ে জেলায় চলনবিলের পুঁটি, চাপিলা, বোয়াল, বেলে ও দাড়কিনাসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ শিকার করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়। চলনবিল অঞ্চলের এসব দেশীয় শুকটি মাছের চাহিদা গোটা দেশজুড়ে। মূলত এই শুঁটকি মাছ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকরাই বেশি কাজ করে থাকেন। এলাকার গরীব ও অসচ্ছল পরিবারের নারীরা এই কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। শুটকির চাতালে মাছ কাটা থেকে শুরু করে পরিষ্কার করা, ধোয়া এবং মাছ রোদে শুকানোর কাজ করে থাকেন নারী শ্রমিকরা। এখানে প্রতিদিন পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। অথচ নারী শ্রমিকরা পান ২৫০ টাকা মাত্র।
সরেজমিনে চলনবিলের বড়পাঙ্গাসী গ্রামে শুটকির চাতালে গিয়ে কথা স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্তী দাসের সঙ্গে। আরও কয়েকজন নারী শ্রমিকের সঙ্গে আবিদ হোসেনের শুটকির চাতালে কাজ করছিলেন তিনি। জয়ন্তী বলেন, সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা তারা সংসার ফেলে চাতালে কাজ করে থাকেন। অথচ তাদের মজুরি দেওয়া হয় ২৫০ টাকা। পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকের দৈনিক মজুরি দেওয়া হয় ৫০০ টাকা।
হাসনা খাতুন বলেন, মালিক পক্ষকে তাদের মজুরি বাড়ানোর জন্য অনেকবার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু মালিকরা তাদের এ আবেদন আমলে নেয়নি। ফলে সংসারের প্রয়োজনে অর্ধেক মজুরিতেই তারা শুটকির চাতালে কাজ করছেন।
নারী শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়ার কথা স্বীকার করে বড়পাঙ্গাসী গ্রামের চাতাল মালিক আবিদ হোসেন বলেন, বিগত কয়েক বছরে ধরে চলনবিলে দেশি প্রজাতির মাছ কমে গেছে। আগে প্রতিজন চাতাল মালিকলেন ন্যূনতম ২০ থেকে ২৫ টন করে শুঁটকি উৎপাদন ও বিপণন করেছেন। কিন্তু ২-৩ বছর ধরে তাদের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ অঞ্চলে বরাবর নারী শ্রমিকদের মজুরি কম ছিল। তারা সেই ধারাবাহিকতে মজুরি দিয়ে আসছেন। কিন্তু শুঁটকির উৎপাদন কমে যাওয়ায় আপাতত মজুরি বাড়াতে পারছেন না।
শুঁটকি মাছ উৎপাদনকারী মোতাহার হোসেন জানান, তারা কয়েক বছর ধরে যথেষ্ট পরিমাণ মাছ না পেয়ে লোকসান গুণছেন। বছরে মাত্র ৬ মাস এই কাজ করতে পারেন তারা। চলনবিলে এখন ফেব্রুয়ারি মাসের শেষেই পানি একেবারে শুকিয়ে যায়। ফলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারা লাভবান হলে নারী শ্রমিকদের মজুরিও বাড়াবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান ও তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ জানান, শুঁটকি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে অনেক মৌসুমি শ্রমিক অংশ নিয়ে কিছু আয় করার সুযোগ পান। উভয়ই নারীদের পারিশ্রমিকের বৈষ্যম্যের কথা স্বীকার করেন। শ্রমিক বেশি কাজ কম যার প্রেক্ষিতে এমনটা হতে পারে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনূর রহমান জানান, গত বছর জেলায় শুটকি উৎপাদন হয়েছিল ৩০০ টন। চলতি বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টন হতে পারে বলে আশা আছে। নারী শ্রমিকদের মজুরি কম দেওয়ার বিষয়টি শুনেছেন তিনি। তাদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে চাতাল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
"