গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ
কোটি টাকার যন্ত্র কেনায় ‘অনিয়ম’, পড়ে থেকে নষ্ট
সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোটি টাকা মূল্যের লিথোট্রিপসি মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এটি ব্যবহারের জন্য ডাক্তার ও টেকনিশিয়ানকে প্রশিক্ষণ গ্রহনের কথা কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই। প্রশিক্ষণের বরাদ্দ টাকা তুলে নিয়েছে অনেক আগেই। বিষয়টি জানাজানি হলে কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমটি গঠনের পর প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রোগীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের পেট কাঁটা ছেড়া ছাড়াই কিডনী থেকে পাথর অপসারনের জন্য কোটি টাকা মূল্যের লিথোট্রিপসি মেশিনটি পড়ে আছে। যা একদিনও ব্যবহৃত হয়নি। কোন দেশের কোন কোম্পানীর তৈরি মেশিনের গায়ে তার কোনো লেবেল নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে আনা মেশিনটির নাম এক্সট্রাকর্পোরিয়াল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি অপটিক (ইউএস-এফএডিএ)। এই মেশিনের সাহায্যে মানবদেহের বাইরে থেকে কিডনীর পাথর ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব। এর ফলে অপরেশনের ধকল সইতে হয় না রোগীদের। সেই সঙ্গে রোগীদের বাঁচে অর্থ ও মূল্যবান সময়। ২০২২ সালে মেশিনটি সরবরাহ করেন নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা বন্দরের নৌবাহীনির ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড। প্রকৌশলীরা এই মেশিনটি প্রথম দিনে স্থাপন করার সময় এই মেশিনটি নষ্ট দেখতে পান। এরপর থেকে এটি পড়ে আছে হাসপাতালের স্টোর কক্ষে।
হাসপাতালে চিকিৎসারত রায়গঞ্জ উপজেলার তেলিজানা গ্রামের আব্দুল মমিন (৫৫) জানান, তার কিডনির পাথর অপারেশনের মাধ্যমে বের করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক চিকিৎসক জানান, যদি কোটি টাকার এই অত্যাধুনিক মেশিনটি চালু থাকত তাহলে এই রোগীর পেট না কেটেই পাথর বের করা সম্ভব হত।
এ ব্যাপারে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের প্রধান ডা. মো. মাসুদ রানা বাদল জানান, এই মেশিনটি চালু থাকলে হতদারিদ্র মানুষদের কাঁটা ছেড়া ছাড়াই সফলভাবে কিডনী থেকে পাথর অপরেশন করা সম্ভব হত। রোগীদের আর ঢাকায় গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করা লাগত না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে হাসপাতালের স্টোর কক্ষে মেশিনটি পড়ে রয়েছে। তাই রোগীদের ভোগান্তি দূরিকরণে এটি চালু করা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে।
চিকিৎসক ডা. এ জেড এম তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এই প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ প্রশিক্ষণ গ্রহন করছে বলে, আমার জানা নাই।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা বন্দরের নৌবাহীনির ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তানা কোনো কথা বলেনি।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সহকারী পরিচালক ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দিয়েছে। ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি গত সপ্তাহে ঢাকায় বদলি হয়ে চলে আসছি। আমার আগে এখানে কর্তব্যরত পরিচালক দ্বয়ের সময় এই ঘটনাগুলো ঘটছে। এ বিষয় তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেওয়ার কথা।
"