ইবি প্রতিনিধি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
তিন সিসি ক্যামেরায় চলছে ক্যাম্পাস
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন সময় তিন ডজন ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও সচল আছে মাত্র দু-তিনটি। দীর্ঘদিনেরও অকেজো ক্যামেরাগুলো সচল করার কোনো তদারকিও দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনের মধ্যে। এতে ক্যাম্পাসে ঘটা অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ও আলোচিত ঘটনাগুলোর কোনো ফুটেজ উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে চুরি, মারামারি, বহিরাগতদের অবাধে অনুপ্রবেশ, মাদক সরবরাহ ও অসামাজিক কার্যকালাপের মতো ঘটনা ঘটছে। ফলে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্ন হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার প্রক্টর মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন।’
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের জন্য ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, ডায়না চত্ত্বর, শহীদ মিনার, মুক্তবাংলা, জিয়া মোড়, শেখ হাসিনা হল গেট ও ডরমেটরি সংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ২০টি সিসি ক্যামেরা চালু করে তৎকালীন প্রশাসন। সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও আইসিটি সেল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই ২০টির মধ্যে মাত্র ২-৩টি ক্যামেরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদ্দাম হোসেন হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল, টিএসসিসি ভবন, চিকিৎসা কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকার কোনো সিসি ক্যামেরাই সচল নেই। টিএসসিসির চারপাশে একাধিক ক্যামেরা থাকলেও ২০২০ সালের পর থেকেই ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়ে রয়েছে। এর আগে এই ভবনে একাধিক পরিচালক দায়িত্ব পালন করলেও এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেননি তারা। এদিকে গত শনিবার টিএসসিসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পানির ট্যাপ চুরির ঘটনা ঘটলেও ক্যামেরা না থাকায় চোর শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হলের প্রধান ফটক, করিডর, সামনে ও পিছনেসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ১৬টি করে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকে। তবে ক্যামেরার আওতায় নেই সাদ্দাম হোসেন হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাদ্দাম হোসেন হলে কয়েকটি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও সেগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এমনকি দীর্ঘদিন থেকে ভিডিও ফুটেজও সংরক্ষিত হচ্ছে না। একই চিত্র দেখা গেছে শহীদ জিয়াউর রহমান হলেও। এছাড়া অন্য হলগুলোতে ১২ থেকে ১৩ করে ক্যামেরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।
ক্যামেরা না থাকায় সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ইবি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকা। সেখানে বিভিন্ন সময় লোহার তৈরি বেড়া ও সরঞ্জাম চুরির ঘটনা ঘটছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর ফটক, করিডর ও অভ্যন্তরে কিছু ক্যামেরা থাকলেও ভবনের চারপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যামেরার ব্যবস্থা নেই।
এদিকে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান থেকে ছয়টি ককটেল সদৃশ বস্তু পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ক্যামেরা না থাকায় নেপত্থে জড়িতদের শনাক্ত করা যায়নি। এছাড়া গত বছরের ১২ ফেব্রয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ম শেখ হাসিনা হলে আলোচিত র্যাগিংকান্ডেও কোনো সিসিটিভি ফুটেজ মেলেনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আলোচিত ঘটনাগুলোর কোন সিসিটিটি ফুটেজ পাওয়া যায় না।
টিএসসিসির পরিচালক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন বলেন, টিএসসিসির অন্যান্য সংস্কারসহ সিসি ক্যামরার বিষয়টিও আমাদের তদারকির মধ্যে রয়েছে। শিগগিরই এই বিষয়ে প্রশাসনকে একটি নোট দিব।
সাদ্দাম হোসেন হলের প্রভোস্ট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিগত হল প্রশাসনের আমলেই এসব সিসি ক্যামরা বিকল ছিল। আমরা ধারাবাহিকভাবে হলের সব সমস্যার সমাধান করছি। দ্রুতই সিসি ক্যামেরার বিষয়টিও সমাধানের পরিকল্পনা রয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি মূলত প্রক্টরিয়াল বডির কাজ। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে প্রযুকিক্তগতভাবে সহায়তা করা। তাছাড়া ক্যামেরাগুলো প্রক্টরের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবু আমরা এ বিষয়ে প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘ক্যাম্পাসের যেসব পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ছিল সেগুলো বেশিভাগই অকেজো। সেগুলো সংস্কার ও নতুন করে লাগানো হবে।’
"