মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

মানিকগঞ্জ

ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ-টায়ার দূষণে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত করছে চারপাশের পরিবেশ। ফলে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ছে পরিবেশর ওপর। ক্ষতির সম্মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। এছাড়া উজাড় হচ্ছে বনজ ঔষধি সব বৃক্ষ।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের অধিকাংশ ইটভাটায় আগুন দেওয়ার নামে মালিকরা শত শত মণ কাঠ, গাড়ির টায়ার ও ক্ষতিকর প্লাস্টিক স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

পিপুলিয়া এলাকার কৃষক সাহেব আলী বলেন, ভাটার কালা ধোঁয়ার কারণে এখন আর জমিতে আগের মতো ফসল হয় না। ভাটার আগুনের কারণে প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হই। অবৈধভাবে ইটভাটা চালালেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

ডায়না ব্রিকসের ব্যবস্থাপক সরুজ আহমেদ বলেন, শুধু আমাদের ভাটায় না, প্রত্যেক ভাটায় আগুন দেওয়ার সময় কাঠ ও গাড়ির টায়ার লাগে। আমাদের ভাটায় আগুন দেওয়ার জন্য ২০ মণ কাঠ লাগে। তবে ভাটার পাশে রাখা শত শত মণ কাঠের স্তূপের বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

সদর উপজেলার হিজলাইন এলাকার কৃষক সদর আলী বলেন, ‘ইটভাটার আগুনের কারণে গত বছর ৬৫ শতাংশ জমির ধান পুড়ে গেছে। তখন লোকসান হয়েছে, ধারদেনা করে সংসার চালাইছি। ফসলি জমির পাশে ভাটা বন্ধের জন্য ইউএনও ও ডিসিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছিলাম। ভাটা তো বন্ধ হয়ই নাই, উল্টো আমাগো হুমকি-ধমকি সইতে হয়েছে।’

হরিরামপুরের অবৈধ সততা ভাটার ব্যবস্থাপক স্বপন কুমার বণিক বলেন, ভাটায় আগুন দেওয়ার সময় অনেক কাঠ লাগে। সেজন্য ২০ থেকে ৩০ মণ কাঠ এনেছি। ভাটায় একবার আগুন জ্বলতে শুরু করলে আর কাঠ পোড়াই না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অবৈধ ভাটার মালিক বলেন, ইটভাটা পরিচালনার জন্য মালিকদের সংগঠনের নেতারা প্রশাসন ম্যানেজ করে। তাছাড়া ভাটার মালিকেরা তো সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মোটা অঙ্কের সহযোগিতা করে থাকি। প্রশাসন ইচ্ছা করলে আমরা অবৈধ ভাটা চালাতে পারব না।

মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার আল মামুন জানান, শীতের মধ্যে এমনিতেই রোগ বেশি হয়। তাছাড়া ভাটা বা গাড়ির কালো ধোঁয়া মানুষের জন্য খুব ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি সমস্যায় ভোগে।

মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ইউসুফ আলী বলেন, তথ্যমতে জেলায় ১১৫টি ভাটার মধ্যে অবৈধ ভাটা ১৫টি। অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অবৈধ ভাটা কীভাবে চলছে সে বিষয়ে কোনো সদুউত্তর দিতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া ভাটায় কয়লা ছাড়া কোনো কিছু পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যদি কোন ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়, তাহলে সেই ভাটার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close