মল্লিক খলিলুর রহমান, অভয়নগর (যশোর)

  ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

বাড়তি আবাদেও পূরণ হয়নি আমনের লক্ষ্যমাত্রা

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবদহ বিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯০ হেক্টর বেশি জমি আমনের আবাদ করেও এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ধান কাটা শুরু হলেও বিপাকে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবার।

অভয়নগরে প্রতিবছরই রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। চলতি বছরে ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কৃষকের সোনালী স্বপ্নের নবান্ন উৎসব ডুবে গেছে। ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির আমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৯ হাজার ৩৮ মেট্রিক টন কম ধান উৎপাদন হবে মনে করছে কৃষি কার্যালয়।

উপজেলার কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় (নওয়াপাড়া) রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল হাইব্রিড ১ হাজার ৭৯০ হেক্টর, উফসী ৫ হাজার ৮২৫ হেক্টর ও স্থানীয় ২৫ হেক্টর জমি মিলে মোট ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে, অর্থাৎ ৭ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন ধানের উৎপাদন কম হবে প্রায় ৯ হাজার ৩৮ মেট্রিক টন। এবার আমন উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমিতে।

এর আগের বছর আমন উৎপাদন হয়েছিল ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এতে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ১ হাজার ৭৩৬ হেক্টর কম জমিতে রোপা আমন উৎপাদন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সুন্দলী ইউনিয়নের পুরো ৮৩৫ হেক্টর জমির আমন উৎপাদন।

উপজেলার কৃষি কার্যালয় সূত্রে আরো জানা যায়, চলতি মৌসুমে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভায় আমন আবাদ হয়েছিল ৮৫০ হেক্টর জমিতে, কিন্তু ভবদহ জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১০ হেক্টর জমির ধান। একইভাবে উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে ১ হাজার ১৫৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হলেও ক্ষতি হয়েছে ৫৩৩ হেক্টর, সুন্দলী ইউনিয়নে ৮৩৫ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরো ৮৩৫ হেক্টর, চলিশিয়া ইউনিয়নে ১ হাজার ১১ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ হেক্টর, পায়রা ইউনিয়নে ৬০৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৮৮ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আমন আবাদ হয়েছে শ্রীধরপুর ইউনিয়নে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩৯২ হেক্টর জমিতে। বাঘুটিয়া ইউনিয়নে ১ হাজার ৩০৫ হেক্টর, শুভরাড়া ইউনিয়নে ৪৬০ হেক্টর ও সিদ্দিপাশা ইউনিয়নে সর্বনিম্ন ১৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে।

সুন্দলী আড়পাড় গ্রামের কৃষক কিংকর বিশ্বাস বলেন, শুড়িরডাঙ্গা বিলে বর্গা জমিতে রোপা আমন লাগিয়েছিলাম ১ একর (২.৫ বিঘা) জমিতে। জলাবদ্ধতার কারণে পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘পরের জমি বর্গা নিয়ে স্বর্ণা জাতের আমন ধান চাষ করেছিলাম। একে তো বাড়ির উঠানে পানি, তারপর পুরো ধানই নষ্ট হয়ে গেল। ৫ সদস্যের পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব, তাই নিয়ে ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় আছি। সরকার যদি একটু ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে তাহলে বাঁচা যায়।’

উৎপাদন কম হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট প্রভাব কাটিয়ে উঠতে নেওয়া সরকার পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে জানতে চাওয়া হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. লাভলী খাতুনের কাছে। তিনি জানান, ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতার জন্য আমন ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতার ঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তবে যে সব জলাবদ্ধ এলাকা থেকে আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে, সেখানে স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চফলনশীল বিনা-১৪ ধান আবাদের পরিকল্পনা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সময়ের সবজি উৎপাদন বাড়ানোর উপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

উৎপাদন কম হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট প্রভাব কাটিয়ে উঠতে নেওয়া সরকার পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে। তিনি বলেন, ‘কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সবজি চাষ বাড়ানোর জন্য ৪৭৫ জনকে উফশী সব্জি বীজ ও জনপ্রতি নগদ ১ হাজার দেওয়া হচ্ছে। ৮৫০ জনকে হাইব্রিড সব্জি প্রণোদনা দেওয়া হবে। এছাড়া বোরো মওসুমে যাতে বেশি ধান উৎপাদন করা যায় সেদিকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close