মাসুম বিল্লাহ, শালিখা (মাগুরা)
মাগুরার শালিখা
খেজুরগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা
মাগুরার শালিখা উপজেলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খেজুর গাছের গাছিরা। দেখে মনে হবে দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গেং বেড়েছে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা গ্রামাঞ্চলের খেজুর গাছের কদর। শীতের মৌসুম এলেই গাছ কেটে রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গাছিরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, মাজায় গোছা (মোটা দড়ি) পেঁচিয়ে হাতে বড় দা ও পায়ের নিচে শক্ত দড়ি দিয়ে লাঠি বেঁধে দিনভর খেজুর গাছ পরিচর্যা করছেন গাছিরা। গাছের আগায় ওঠে খুব যত্নের সাথে গাছগুলো পরিস্কার করে চোখ কেটে রস বের হওয়ার ছিদ্র করে বাঁশের নল বসিয়ে রেখে দিচ্ছেন তারা। এক সময় দিগন্তজুড়ে মাঠ কিংবা সড়কের দুপাশ দিয়ে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ দেখা গেলেও এখন তা কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও স্থানীয় ইট ভাটায় খেজুর গাছের চাহিদা থাকায় আগের মত আর চোখে পড়ে না রস দানকারী এ গাছের।
এখনো তেমন একটা শীতের দেখা না মিললেও এরই মধ্যে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকে। খেজুর গাছ সংকটের কারণে প্রতি বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছে অনেক গাছি।
শালিখা উপজেলা শরুশুনা গ্রামের গাছি জামাল হোসেন সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতেই গাছ পরিচর্যা করি পরে গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। এই রস থেকে পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি।
তালখড়ি ইউনিয়নের ছান্দড়া গ্রামের কুদ্দুস আলী বলেন, এ বছর তিন পন (২৪০টি) খেজুর গাছ কেটেছি যা গত বছর একটু কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও স্থানীয় ইটের ভাটায় খেজুর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় দিন দিন খেজু গাছ কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন মহল জানিয়েছেন, প্রতি বছরে চার মাস খেজুর গাছ থেকে গুড় ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয়। এ রস অত্যন্ত সুস্বাধু ও মানবদেহের উপকারিতার কারণে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে থাকে। খেজুর গাছ একদিকে যেমন ছায়া ও অক্সিজেন দান করে অপরদিকে সুস্বাদু রস দানের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখে তাই বিলুপ্ত প্রায় এই গাছগুলো বেশি বেশি রোপনের মাধ্যমে খেজুর গাছের অতিত ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে অনুরোধ তাদের।
উপজেলা কৃষি? কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, উপজেলায় প্রায় ২৬ হাজার খেজুর গাছ আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুই ধার দিয়ে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। খেজুর গাছ ফসলের কোনো প্রকারের ক্ষতি করে না। এই গাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। যা সকলের রস ও গুড়ের চাহিদা মিটাবে।
"