চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

  ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লা

চৌদ্দগ্রামে ৮ হাজার কৃষকের গোলায় উঠছে না ধান

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে চলতি আমন মৌসুমে এবার ৮ হাজার কৃষকের গোলায় কোনো ধান উঠছে না। ফলে এই কৃষক পরিবারকে মহা সংকটে পড়তে হবে।

জানা গেছে, আমন মৌসুমে এই উপজেলায় ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় এবার প্রায় ৮ হাজার কৃষকের স্বপ্ন প্রায় মাটির সাথে মিশিয়ে যায়। ফসল না হওয়াতে দেখা দিতে পারে গো খাদ্যের সংকটও। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।

উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রান্তিক কৃষকদের বেশিরভাগ জমিগুলোতে শুধু আগাছা জন্মে আছে। ফলে এবার আর দেখা মিলছে কোনো আমান ধানের। গত ২১ আগস্ট সৃষ্ট বন্যার কবলে পড়ে একাধিকবার আমনের চারা নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা এই চাষে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন।

বর্তমানে এই উপজেলায় মাত্র ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। তা আবার আশানুরুপ কোনো সুফল পাওয়া যাবে না বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের আবাদি জমিগুলোতে বন্যার পানি এখনো জমে থাকায় সহসায় কোন চাষ করা যাচ্ছে না বলে কৃষককুল জানান।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য চৌদ্দগ্রামের প্রায় ৬ হাজার কৃষককে প্রনোদনা হিসেবে ৫ কেজি ব্রিধান ৭৫ ও ব্রিধান ১৭ প্রদান করা হয়। জমিগুলো কৃষি উপযোগী করার জন্য ১০ কেজি ডিএপি ও ১ কেজি এমওপি সার প্রদান করা হয়।

আমনের বীজ দেওয়া হলেও এবার আর কোনো কাজে আসছে না। অসময়ে কৃষকরা অন্য উপজেলা থেকে আমনের চারা এনে জমিতে লাগালেও ধান আসবে না বলে কৃষকরা বলেন। তিন স্তরের বিপদে পড়ে এবার লোকসান গুণতে হচ্ছে কয়েক হাজার কৃষককে।

উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামে কৃষক নজির আহমেদ বলেন, তিন হাজার টাকা খরচ করে অন্যের জমিতে বীজতলা তৈরি করি। কিন্তু ২১ আগস্ট বন্যা দীর্ঘস্থায়ীত্ব হওয়ায় সেই বীজতলাও নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে আবার বীজতলা তৈরি করি। এরপর একাধিকাবার বৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতায় সেই বীজতলাও নষ্ট হয়ে যায়।

বাতিসা ইউনিয়নের দেবিপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন মজুমদার বলেন, বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য কৃষিস্প্রসারণ অফিস চৌদ্দগাম থেকে আমাদের ধান ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়। বীজতলা তৈরির পর আবারও একাধিকবার ভারীবর্ষণে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রণোদনা কোনো কাজে আসেনি। যার কারণে আমিসহ এখানে কয়েকশ কৃষকের জমিগু এবার খালি পড়ে আছে।

এদিকে প্রতিবছর আমনের খড় দিয়ে কৃষকরা তাদের গৃহপালিত পশুর খাদ্যের জোগান দিতে পারলেও এবার আমন চাষ না হওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হবে। এই নিয়ে কৃষকরা দুঃচিন্তার মধ্যে পড়বে।

সোনাপুর গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, প্রতিবছর আমনের খড় দিয়ে আমার গৃহপালিত গরুর খাদ্যের জোগান দিয়ে থাকতাম। কিন্তু এবার আমন চাষ না হওয়ায় গো-খাদ্যের সংকটে পড়তে হবে। আমার ৭টি গরু আছে। এই গরুগুলোকে নিয়ে খাদ্যের সংকটে পড়তে হবে আমাকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুবায়ের আহমেদ বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬ হাজার কৃষকের মধ্যে ধান ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আবহাওয়া ঠিক থাকলে প্রায় ৬০ শতাংশ ধান কৃষকরা গোলায় ওঠাতে পারবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close