সালাহ্উদ্দিন শুভ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মণিপুরীদের মহারাসলীলা শুক্রবার পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মণিপুরী পাড়াগুলোতে বিকেল থেকেই মৃদঙ্গের তালে মণিপুরী গান ভেসে বেড়ায়। গান আর মৃদঙ্গের তাল অনুসরণ করে একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে মণিপুরীদের নাচের প্রস্তুতি। মণিপুরীঅধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। চলছে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য এবং রাসনৃত্যের মহড়া। অন্যান্য বছরের মতো এবারও মণিপুরীদের পৃথক দুটি গ্রামে আয়োজন করা হয়েছে রাস উৎসবের।
উপজেলার মাধবপুরের জোড়া মণ্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া (মণিপুরী) সম্প্রদায়ের ১৮২তম এবং আদমপুর মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মীতৈ (মণিপুরী) সম্প্রদায়ের ৩৯তম মহারাস উৎসব হবে।
জানা যায়, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন। মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালবেলা ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখাল নৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখাল নৃত্য।
এরপর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা শেষে রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ। মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে গেয়ে কৃষ্ণবন্দনা ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৪০-৪৫ জনের মতো গোপী থাকেন।
গত সোমবার উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের মাঝেরগাঁও ও শিমুলতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাড়াগুলোতে চলছে রাস উৎসবের মহড়া। প্রায় ১ মাস ধরে এখানে রাস উৎসবের মহড়া চলছে। মহড়ায় আসা মণিপুরী ছেলেমেয়েদের রাসনৃত্যের বিভিন্ন কৌশল ও নিয়মকানুন শিখিয়ে দিচ্ছিলেন রাসনৃত্যের শিক্ষক অজিত কুমার সিংহ। সঙ্গে রনি সিংহ মৃদঙ্গ বাজিয়ে ও রীনা সিংহা গান গেয়ে সেই মহড়ার তাল দিচ্ছিলেন। রাস উৎসবে এই গান ও তালের সঙ্গেই সারারাত ধরে নাচতে হবে শিল্পীদের। প্রায় ২৫ জন ছেলেমেয়ে শিক্ষকদের কথা অনুযায়ী মহড়া দিচ্ছিলেন। মহড়ায় আসা মনিকা সিনহা বলেন, ‘এখানে প্রায় ২০ দিন ধরে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন মহরায় অংশ নিচ্ছি। রাস উৎসব নিয়ে আমাদের ভালো প্রস্তুতি আছে।’ শিক্ষক অজিত কুমার সিংহ বলেন, ‘প্রতিদিন নিয়ম মেনে সবাই আসেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ মহড়া চলছে।’
রাসনৃত্যের আরেক শিক্ষক বিধান কুমার সিংহ বলেন, ‘এই রাসনৃত্যের জন্যই মহড়া হচ্ছে। দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা এই রাস উৎসব দেখতে এখানে ভিড় করেন। এটা মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব।’
মহারাসলীলা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, ‘রাস উপলক্ষে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি চলছে। এই মহোৎসব উপলক্ষ্যে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। রাসলীলা মণিপুরীদের আয়োজন হলেও সবার আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতির বাঁধনে বেঁধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন।’
"