শামশুল আলম শ্রাবণ, কক্সবাজার

  ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

লিংকরোড়-ডলফিন মোড়

কক্সবাজারে মহাসড়কে পার্কিং কাউন্টার স্থাপনে যানজট

* মহাসড়কের পাশে কাউন্টার স্থাপনে হচ্ছে যানজট * বর্তমান টার্মিনালটি একপ্রকার গ্যারেজ বলা চলে * পর্যটকদের ভোগান্তির শঙ্কা

পর্যটনের রাজধানী খ্যাত জেলা কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ভ্রমন পিপাসু মানুষের প্রধান আকর্ষণ। প্রতিবছর ডিসেম্বর টু ফেব্রুয়ারিতে লাখো পর্যটকের পদভারে মুখরিত থাকে এ শহরটি। বছরের অন্যান্য সময় ও পর্যটক থাকে কমবেশি। পর্যটকদের সুবিধার্থে সরকারি ও বেসরকারিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক হোটেল মোটেল জোন, টুরিস্ট পুলিশ, পর্যটন সেল, মেরিন ড্রাইভ রোড়, আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর ও বিভিন্ন বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। সব বিষয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলে ও সম্পূর্ণ হ-য-ব-র-ল অবস্থায় রয়েছে পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট টার্মিনালের।

দেশের সব জেলা থেকে আগত দূরপাল¬ার বাস রাখার জন্য ২০০১ সালে নির্মিত হওয়া একটি নির্দিষ্ট বাসটার্মিনাল থাকলে ও সেখানে গাড়ি রাখার জায়গা নেই বললেই চলে। গাড়ি রাখবার জায়গাগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গ্যারেজ, কাউন্টার এবং অসংখ্য বেকারি। এসব আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গ্যারেজ ও বেকারির মালিক রাজনৈতিক নেতারা।

ঝিলংজা ইউনিয়নের আওতাধীন এলাকায় নির্মিত হওয়া টার্মিনালটি শুরু থেকেই সম্পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় কক্সবাজার পৌরসভাকে। ফলে যতবার পৌরসভার মেয়রের পরিবর্তন হয়েছে ততবারই গাড়ি রাখবার জায়গাগুলো দলীয় নেতা ও মেয়র-কাউন্সিলরদের নামে বে-নামে নামেমাত্র মূল্যে লিজ দেওয়ার নামে দখল করা হয়েছে। শুরুতে ২৫০-৩০০ গাড়ি রাখার লক্ষ্যে টার্মিনালটি নির্মিত হলেও বর্তমানে গাড়ি রাখা যায় সর্বোচ্চ ৫০-৬০টি।

কক্সবাজার বাসটার্মিনালে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করে আসা আমির হোসেন বলেন, একসময় বাসটার্মিনালে অনেক প্রসস্থ জায়গা ছিল,তখন ২৫০-৩০০ দূরপাল¬ার বাস রাখার স্থান ছিল। তবে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৫০ টির বেশি বাস রাখার জায়গা নেই। বেশির ভাগ গাড়ি রাখবার জায়গাতে নির্মিত হয়েছে আবাসিক হোটেল, গ্যারেজ, বেকারী দোকান এবং কাউন্টারের মাধ্যমে দখল করা হয়েছে। আর এই দখলের মূল কারিগর অবশ্যই সাবেক ২ মেয়র, মুজিবুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান এবং পৌর সচিব।

আগামী মাস থেকে পর্যটন মৌসুম আরম্ভ হবে। পর্যটকদের বহন করে নিয়ে আসা দূরপাল¬ার বাসগুলো রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তীব্র যানজটের শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা। যানজটের ফলে পর্যটকরা অতিষ্ট হয়ে উঠে অনেক সময় ফিরে যায় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই। মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই লিংকরোড় হতে ডলফিন মোড় পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পার্কিং করা হয় দূরপাল¬ার বাস। মৌসুম শুরু হলে তার আকার আরো বাড়বে নিঃসন্দেহে। মহাসড়কে এভাবে বাস পার্কিং করে রাখলে তীব্র যানজটের শঙ্কা রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিক বিভাগে নিয়োজিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী পিপিএম বলেন, জেলার একমাত্র বাস টার্মিনালটি পৌর কর্তৃপক্ষ গ্যারেজে পরিণত করে রেখেছে। দূরপাল¬ার বাস তো দূরে থাক স্বল্পপাল¬ার বাসগুলো এখন মহাসড়কের পাশে কাউন্টার স্থাপন করে যাত্রী সেবা দিচ্ছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। শুক্র-শনিবার অতিরিক্ত পর্যটকবাহী গাড়ি শহরে প্রবেশের কারণে পাবলিক টার্মিনালে গাড়ি পার্কিংয়ের পর ও অতিরিক্ত গাড়িগুলো মহাসড়কে পার্কিং করতে বাধ্য হয় এবং আমরা ও কিছুটা সময় ছাড় দিয়ে থাকি। পুলিশ সুপার অফিস থেকে একটি অনলাইন টার্মিনাল চালু করেছি, সেখানে সিডিউল থাকে কোন গাড়ি কোন কাউন্টার থেকে কয়টায় ছাড়াবে সেটির। চেষ্টা করছি আগত পর্যটন মৌসুমে যানজট সম্পূর্ণ নিরসনের এবং একটি পর্যটন বান্ধব ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।

এ বিষয়ে আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক নেতা করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সভায় বারবার অভিযোগ দিয়ে আসছি টার্মিনাল সংস্কার করে কার্যকর টার্মিনালে রুপান্তর করতে। ওনারা ও আশ্বাস দেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না। বর্তমান টার্মিনালটি একপ্রকার গ্যারেজ বলা চলে। এটিকে কার্যকর টার্মিনালে রুপান্তর করতে পারলে মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং আশি ভাগ কমে যাবে বলে বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close