আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার আমতলী
২১ বছরেও টিয়াখালী কলেজ হয়নি এমপিওভুক্ত
বরগুনার আমতলীতে টিয়াখালী কলেজটি ২১ বছরেও হয়নি এমপিওভূক্ত। সদর ইউনিয়নের টিয়াখালী গ্রামের শিক্ষানুরাগী মো. দেলোয়ার হোসেন ২০০০ সালে প্রায় সোয়া দুই একর জমির ওপর টিয়াখালী কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ সালে কলেজটি বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে।
জানা গেছে, স্বীকৃতি লাভের পর কলেজ থেকে প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে আসছে। ২০০২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ২১ বছরের গড় পাসের হার ৭২। ২০১৯ সালে কলেজ থেকে শত ভাগ পাস করারও রেকর্ড রয়েছে। চলতি বছরও ২০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ১৫ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। বর্তমানে কলেজটিতে ৩২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বোর্ডের এবং মন্ত্রনালয়ের সকল নিয়ম কানুন সম্পূর্ন বাস্তবায়ন করলেও শুধু রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে কলেজটি এমপিওভূক্ত করা হয়নি বলে জানা গেছে।
কলেজেটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি ছিলেন উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক। কলেজটি প্রতিষ্ঠার সময় বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও এর যাবতীয় কার্যক্রম গুছিয়ে ওঠার মধ্যেই সরকার পরিবর্তন হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর চারবার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করে। কিন্তু রাজনৈতিক রোষানলের কারণে টিয়াখালী কলেজটি আর এমপিওভূক্ত হতে পারেনি দীর্ঘ ২৪ বছরেও। আওয়ামী লীগ সরকার কলেজটি এমপিওভূক্ত না করলেও ২০১৭ সালে একটি চারতলা ভবন করে দিয়েছেন। এটাই এখন শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের শান্তনা। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন অবসরে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কৃষি শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক কেএম সোহেল।
কলেজটিতে বর্তমানে ৩০ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মচারী রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো বেতন ভাতা না পেয়ে এখন হতাশ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
কলেজের একাদশ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ও বনি আমিন জানান, এখানে লেখাপড়ার মান খুব ভালো। স্যারেরা অনেক যত্ন সহকারে লেখাপড়া শিখান। কলেজটি এমপিওভূক্ত হলে ছাত্রছাত্রীর সংখা আরো বাড়বে।
কলেজের পিওন মো. শাহানুর ফকির বলেন, ‘কলেজে চাকরি করি। কিন্তু কোনো বেতন ভাতা পাই না। এখন আর সংসার চালাইতে পারি না। বাপের জমিজমা যা পাইছিলাম আর স্ত্রী স্বর্নলঙ্কার বিক্রি করে সংসার চালাইয়া সব শেষ করছি। তারপর ধার কর্জ করে খাচ্ছি’।
কলেজের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনন বিভাগের প্রভাষক মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, এই কলেজে চাকরি করে এখন শেষ সময়ে এসে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হবে এটা জীবনের বড় কষ্ট।
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ (অব:) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলার সকল কলেজের মধ্যে আমার কলেজের শিক্ষার গুনগত মান এবং ভালো ফলাফল থাকা সত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এমপিওভূক্ত করেনি। এতে শিক্ষক কর্মচারী এবং এলাকার হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আশা করি বর্তমান সরকার টিয়াখালী কলেজটি এমপিওভূক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কলেজটিতে বর্তমানে ৩০ জন শিক্ষক ৮জন কর্মচারী এবং ৩২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কলেজটির শিক্ষকরা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে কলেজটি এমপিও ভুক্ত দাবি জানিয়েছেন।
"