বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
বাঁশখালীতে জনবল ও চিকিৎসক সংকট
বাঁশখালীতে জনবল ও চিকিৎসক সংকট চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কর্মস্থল ফাঁকি, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মান খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল ও চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা। ফলে গ্রাম্য চিকিৎসক বা ওষুধের দোকানদাররাই রোগীদের ভরসা। রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এদিকে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে বাহারছড়া, কাথরিয়া, সরল ও ছনুয়া এ চারটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র এবং সাধনপুর ইউপির বানীগ্রাম, বৈলছড়ি ও পুইছুড়ি এ তিনটি ইউনিয়নে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। আর পুকুরিয়া, খানখানাবাদ, কালীপুর, শীলকূপ, গন্ডামারা, চাম্বল ও শেখেরখীল ইউনিয়নে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে ইউনিয়ন ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ’ কেন্দ্রগুলোতে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা, একজন ভিজিটর, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন আয়া এবং একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী থাকার কথা। আর ‘উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে’ একজন মেডিকেল কর্মকর্তা, একজন উপসহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন মিডওয়াইফ, একজন পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী থাকার কথা।
এদিকে, পুঁইছুড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে একজন উপসহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা ছাড়া আর কোনো জনবল নেই। তবে একজন মেডিকেল কর্মকর্তা থাকলে ও তিনি নানান অজুহাতে কেন্দ্র চিকিৎসা সেবা না দিয়ে হাজিরা খাতায় উপস্থিত সাক্ষর থাকলেও বাইরে চেম্বার করাসহ সরকারি দায়িত্ব পালন না করার বেশ কয়েকটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, চিকিৎসা বঞ্চিত স্থানীয় সাধারণ জনগণ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে (পরিষদের চেয়ারম্যান ও সকল ইউপি সদস্যদের সাক্ষরিত প্যাডে) লিখিতভাবে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলাসহ নানান অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ দায়ের করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বর্তমানে তাকে দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আলট্রা করা হয় বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। উপ-সহকারী মেডিকেল কর্মকর্তা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
বাণীগ্রাম সাধনপুর ও বৈলছড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে একজন মেডিকেল কর্মকর্তা ছাড়া আর কোন জনবল নাই। তারা সপ্তাহে তিনদিন চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানানো হলে ও তবে স্থানীয়দের অভিযোগ এসব নামমাত্র চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। অনেক সময় তিন দিনের জায়গায় সপ্তাহে ১-২ দিন ও ডাক্তার আসেন না।
এ তিন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রে কাথরিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা, একজন পরিবার কল্যান পরিদর্শীকা ও একজন নৈশপ্রহরী ছাড়া আর কেউ নেই।
এ কেন্দ্রগুলোর দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ। তবে এ চারটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কাথরিয়া কেন্দ্র ছাড়া অন্য তিনটি জনবল সংকটের কারণে গ্রামের লোকজন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ছনুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি ভিতর থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পরে এ বিষয়ে কথা হলে ওই গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর ও হাসিনা আক্তার বলেন, প্রতি সপ্তাহে তিন দিন স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক সময় তাদের পাওয়া যায় না।’
পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদের বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল কম থাকার বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সব্যসাচী নাথ বলেন, আমাদের যে তিনটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে সবখানে সপ্তাহে ৩ দিন ডাক্তার থাকেন। পুঁইছুড়ি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র যে মেডিকেল কর্মকর্তা আছে তাকে দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলট্রা করানো হয়। তবে কোনো চিকিৎসক যদি নিজ দায়িত্বে অবহেলা করে তার যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ হাতে পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে বাঁশখালীতে ৫টি সাব সেন্টার কাগজে কলমে থাকলে ও কিন্তু এসব সাব সেন্টারের জন্য জমি ও বিল্ডিং কোনটাই নাই। জলদী পৌরসভা এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আওতাধীন সাব সেন্টারের জায়গা থাকলে ও বর্তমানে ভবন পরিত্যক্ত। যার ফলে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে শতভাগ চিকিৎসা সেবার ধারণ ক্ষমতা থাকলে বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নতি করার জন্য এবং শূন্যপদের বিপরীতে জনবল চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ৩ বার তালিকা পাঠানো হয়েছে।
"