মঞ্জুরুল হক, জামালপুর
জগন্নাথগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট
পরিত্যক্ত রেললাইনের ওপর বাড়ি ও দোকান নির্মাণ
জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ ঘাট ও বাহাদুরাবাদ ঘাটের রেলের পরিত্যক্ত জমি দখলসহ সরকারি জায়গায় গড়ে উঠছে দোকানপাট ও বাড়িঘর।
জানা গেছে, জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার জগন্নাথগঞ্জ ঘাট ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাটের বেশকিছু অংশ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অনেক দিন পড়ে থাকার কারণে নানা জঞ্জাল ও আস্তে আস্তে দখলে পরিণত হচ্ছে।
জানা যায়, ১৮৯৯ সালে জামালপুর থেকে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট ও ১৯৩৮ সালে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট দিয়ে যমুনা নদীতে রেল ফেরি সার্ভিস চালু হয়। পরে ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ায় জগন্নাথগঞ্জ ঘাট থেকে সিরাজগঞ্জ ঘাটের সঙ্গে ফেরি পুরোপুরি বন্ধ হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু লিঙ্ক রোডে ট্রেন চলাচল শুরু হলে সরিষাবাড়ির আওনা ইউনিয়নের দৌলতপুর ফাজিল মাদরাসার পেছন থেকে ১৫ কিলোমিটার রেলের পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
২০১২ সালে তারাকান্দি থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলওয়ে স্টেশন নতুন রেলপথ তৈরি হলে এই ট্রেনটিও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে চলাচল শুরু করে। তখন থেকে এই ঘাট লাইনটি অব্যবহৃত রয়েছে। এছাড়া জগন্নাথগঞ্জ পুরাতনঘাট রেলস্টেশনটি বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত করে স্থানান্তরিত হলেও যমুনা নদীরপাড়ে অপর রেলস্টেশন, স্লিপার, রেললাইন পরিত্যক্ত হয়ে যায়। অনেক জায়গায় রেললাইন মাটির নিচে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া এবং এদিকে ঢাকা, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং সিলেট, গৌহাটি এবং বার্মার সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল জগন্নাথগঞ্জ এবং বাহাদুরাবাদ ঘাট।
বর্তমানে জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে আর কোনো ট্রেন চলাচল করে না। জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে এখন আর লঞ্চ নেই, ফেরি নেই, ঐতিহাসিক সেই পুরাতন ঘাটটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অনেক আগেই।
জগন্নাথগঞ্জঘাটের মতিয়র রহমান তালুকদার ও স্টেশনের বুকিং সহকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুধুই স্মৃতি হিসেবে রয়েছে মরিচা ধরা ছোট্ট স্টেশনের অংশবিশেষ।
এই বাজারের কালাম মিয়া বলেন, সরকার যার কাছ থেকে রেলের জন্য জায়গা নিয়েছিল তারই আত্মীয়-স্বজনেরা দখলে নিয়ে স্থাপনা গড়ছে।
একই অবস্থা দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ নৌ-ঘাটের। এখন আর স্টিমার নজরে পড়ে না বাহাদুরাবাদ ঘাট ও ফুলছড়ি-বাহাদুরাবাদ রুটে। ঘাটের অসংখ্য স্থানে রেললাইনের নিচের মাটি সরে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, কাঠের স্লিপার পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় রেলপাত নষ্ট হয়ে গেছে। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে রেলস্টেশনের টিনের তৈরি ঘর ও অন্য সরঞ্জামাদি।
যমুনার পশ্চিম পাড়ের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, দিনাজপুরের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জামালপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুর এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠী। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করতে বাহাদুরাবাদ থেকে ফুলছড়ি ঘাট রুটে আবারো ফেরি ও ট্রেন চলাচলের দাবি জানিয়েছেন রেলওয়ে যাত্রীরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে বাহাদুরাবাদ ঘাট ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট দিয়ে যমুনা নদীতে রেল ফেরি সার্ভিস চালু হয়। ২০০৫ সালে যাত্রীবাহী ফেরি পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৭ সালে যমুনা নদীর নাব্য সংকটে বাহাদুরাবাদ ঘাটটি ইসলামপুরের কুলকান্দি থেকে সরিয়ে দেওয়ানগঞ্জের চুকাইবাড়ি হলকার চরে বাহাদুরাবাদে স্থানান্তর করা হয়।
আরো জানা যায়, দেওয়ানগঞ্জ বাজার স্টেশন থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত নতুন করে রেলপথ নির্মাণ করা হয়। পুনরায় ট্রেন সার্ভিস চালুর কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত এ রুটে ট্রেন চালু হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমাস মিয়া বলেন, ফেরি ও ট্রেন বন্ধ হওয়ায় এলাকার হাজারো কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন।
দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেন বলেন, ২০০৪ সালে ঢাকা-দিনাজপুরগামী আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীবাহী ফেরি চলাচল বন্ধ হয়। ২০০৫ সালে বন্ধ হয় তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীবাহী ফেরি চলাচল। ২০০৭ সালে দেওয়ানগঞ্জের হলকারচরে বাহাদুরাবাদ ঘাট স্থানান্তরের পরে কিছু দিন মালবাহী ফেরি চলাচল করলেও ২০১৪ সালের পর থেকে যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-প্রকৌশলী (পথ) মোহাম্মদ আবু সাঈদ হাসান বলেন, বাহাদুরাবাদ ঘাটে সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।
"