নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ
ডেঙ্গুর প্রকোপে হাসপাতালে রোগীর চাপ
নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেই। শুধু শহর ও শহরতলীতেই নয়, উপজেলা পর্যায়েও বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ। ২৪ ঘণ্টা অন্তর নারায়ণগঞ্জের দুটি সরকারি হাসপাতাল ভিক্টোরিয়া ও ৩০০ শয্যায় কমপক্ষে ১০০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী আসছে। গত জুলাই মাসের শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। নারায়ণগঞ্জের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আজ পর্যন্ত কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু না হলেও গত এক মাসের ব্যবধানে ডেঙ্গুতে নারায়ণগঞ্জের দুই শিক্ষার্থী ও এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩১৩ জনে। এরমধ্যে অক্টোবর মাসে নারায়ণগঞ্জ শহরে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় সাড়ে চারশত জন। এর আগের মাস, সেপ্টেম্বরে হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ১৮০ জন। চলতি সপ্তাহে প্রতিদিন ৮০/৯০ জনের ডেঙ্গুটেস্টে কমপক্ষে ৬০/৭০ জন ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়ছে। শয্যা সংকটের কারণ দেখিয়ে ৩০০ শয্যা ও ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে অনেক রোগী ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এদের অধিকাংশই বাসায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
গত কিছুদিন ধরেই সরকারি দুটি হাসপাতাল ভিক্টোরিয়া ও ৩০০ শয্যায় ডেঙ্গু টেস্ট নিয়ে চলছে ছয় নয়। রোগীদের কাছ থেকে দ্রুত পরীক্ষা করিয়ে দেয়ার কথা বলে দালালচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ, তাদের বলা হয় দুপুর আড়াইটায় ডেঙ্গুর রিপোর্ট দেওয়া হবে। কিন্তু সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালের বারান্দায় বসে থেকেও তারা রিপোর্ট পান না। অথচ হাসপাতালের কিছু লোক রোগীদের কাছে গিয়ে বলে প্যাথলজিতে পরিচিত লোক আছে। পঞ্চাশটা টাকা দেন, রিপোর্ট পাবেন। টাকা দিলেই তারা রিপোর্ট এনে দেয়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মশা নিধনে পাশাপাশি ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ড্রেন, ডোবা ও ছাদবাগানেও ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম জোরদার করার দাবি উঠেছে সর্বমহলে।
৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্তাবধায়ক আবুল বাসার বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কারও জ্বর জ্বর ভাব দেখা দিলে, গায়ে ব্যথা থাকলে ডেঙ্গু টেস্ট না করে ওষুধ খাবেন না।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আরএমও জহিরুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি অনেক ভয়ানক হয়ে
উঠছে। হাসপাতালে যতজন ভর্তি
হয়েছেন, তার চেয়ে বেশি চিকিৎসা নিতে আসছেন। নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি নিয়ে সংকটে পড়তে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ৩৯টি অঞ্চলকে ডেঙ্গু সংক্রমণের হটস্পট চিহ্নিত করেছি। এডিস মশা জন্ম নেয় এমন অঞ্চলে কাজ করব। নোংরা জায়গা পরিষ্কার ও এডিস মশার বাসস্থান দূর করব।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন এএফএম মুশিউর রহমান বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের সব প্রস্তুতি রয়েছে। চলতি বছর মোট ১৩০৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জে। চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০৮৭ জন। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে শতাধিক চিকিৎসাধীন।
"