শেরপুর প্রতিনিধি

  ০৩ নভেম্বর, ২০২৪

শেরপুরের ঝিনাইগাতী

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও রাস্তা মেরামতের দাবি

‘এ বছর মহারশি, সোমেশ্বরী, মালিঝি নদীর পানি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। গত ৩০-৪০ বছরের মধ্যে এমন বন্যা দেখেনি স্থানীয় বাসিন্দারা। এবারের বন্যায় এ উপজেলায়

ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পর থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বন্যার্তদের পাশে

দাঁড়াতে’।

গত শুক্রবার সকালে এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, শেরপুর জেলা সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল।

মাহমুদুল হক রুবেল আরও বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই বন্যায় সরকারি সম্পত্তি ও অবকাঠামোর যে ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো মেরামতের দায়িত্ব সরকারের; কিন্তু সাধারণ মানুষের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো পূরণ হবে কীভাবে? এক্ষেত্রে নিশ্চয়ই অন্তর্বর্তী সরকারের করার আছে অনেক। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট গুলো বিধ্বস্ত হওয়ায়, মানুষ যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে’।

জানা গেছে, গত ৩ অক্টোবর রাতে উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার প্রকোপ শেষ হওয়া মানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মানুষের। স্পষ্ট হয়েছে বন্যাজনিত ক্ষতগুলো।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যায় সম্পূর্ণ ভাবে দেড় কিলোমিটার ও সাড়ে তিন কিলোমিটার নদীর বাঁধের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আধা পাকা ১১০টি ঘর সম্পূর্ণ, ১৬৮টি আংশিক, কাঁচা ঘর ৩৯০টি সম্পূর্ণ ও ১১০টি ঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ভেসে ও মারা গেছে অর্ধশতাধিক গরু-ছাগল, প্রায় ১৭ হাজার হাঁস-মুরগী ভেসে গেছে, ৩ হাজার ৬৮১ হেক্টর সম্পূর্ণ ও ৫ হাজার ৮২১ হেক্টর জমির আবাদি ফসল আংশিকভাবে ক্ষতি হয়েছে। অন্তত ৫০টি কাঁচা ও পাকা রাস্তা, ৮টি সেতু ও ২৭টি কালভার্টের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১০টি, সাড়ে চার শতাধিক নলকূপ, ১ হাজার ১০০টি স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে প্রায় ১ হাজার পুকুরের মাছ। সব মিলিয়ে আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। তবে জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

বনকালি এলাকার মুকবুল হোসেন বলেন, ‘আমার দুইটা বসত ঘর ছিল। বন্যার পানি আসায় দুইটাই ভেঙে পড়ে গেছে। আমি এখ পর্যন্ত খাবারের প্যাকেট ছাড়া কিছুই পায়নি। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া আমার বসত ঘর নির্মাণ করা অসম্ভব।’

নলকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘এর আগে এমন পানি দেখিনি আমরা। আমার ইউনিয়নে প্রায় মাটির ঘর ভেঙে গেছে। পাকা, আধাপাকা, কাঁচা বাড়ি ঘরেরও ক্ষতি হয়েছে। এখন জরুরিভাবে পুনবার্সন দরকার। উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘর-বাড়ি মেরামতের জন্য ঢেউটিন ও নগদ অর্থ সহায়তা করা হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার পর থেকেই ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণে ঢেউটিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close