মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

  ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া

এক মাদরাসায় শিক্ষক ১২, শিক্ষার্থী ৭ জন

* সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তদন্ত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি * কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও প্রতিষ্ঠানে নেই ল্যাব ও ল্যাপটপ * বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীশূন্য

কাগজ-কলমে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা মেলে ৭ জন শিক্ষার্থীর। তবু ১২ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আমড়াছিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া নেহাল উদ্দিন দাখিল মাদরাসাটি যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর ১৯৯৫ সালে এমপিওভুক্ত হয়।

দীর্ঘ দিন ভালোভাবে কার্যক্রম চললেও ২০০৭ সালের সিডরের পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দেউলিয়া পর্যায়। মাসের-পর মাস প্রতিষ্ঠান প্রধান (সুপার) মো. আনিসুর রহমান অনুপস্থিত থাকেন এবং মাঝেমধ্যে গিয়ে অফিস সহায়ক মধু মিয়ার সহযোগিতায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তদন্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

একাধিকবার সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা, বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে ৭-৯ জন শিক্ষার্থী। ক্লাসরুমে সরকারের দেওয়া বইগুলো পড়ে আছে কিন্তু তা বিতরণ করার মতো শিক্ষার্থী নেই। ১২ জন শিক্ষক থাকলেও উপস্থিত ছিলেন ৬-৮ জন। গত রবিবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৪ এবং ৭ম শ্রেণিতে ৩ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। বিদ্যালয়টির ৮ম ও নবম-দশম শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী শূন্য।

নাম না প্রকাশে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, শিক্ষক-কর্মচারীরা হাজিরা খাতায় উপস্থিতি স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন। আর কম্পিউটার শিক্ষক থাকলেও প্রতিষ্ঠানে নেই ল্যাব এবং ল্যাপটপ। চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছে। কাগজ-কলমে ২ শতাধিক শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে ১৫-২০ জনও পাঠ গ্রহণ করে না। এছাড়া কম্পিউটার শিক্ষক এমাদুল হকের কম্পিউটারের বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য অফিস সহায়ক মধু মিয়া ও সুপার যোগসাজস করে সব সুবিধা গ্রহণ করেন এবং নিয়োগ বাণিজ্য করেন। তাদের কারণেই প্রতিষ্ঠান ধ্বংস। এখানে সরকারের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই না।

দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা আল আমীন হোসেন মাদরাসাটির দৈন্যদশার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দা, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বাদশা মাদরাসাটির দৈন্যদশার সত্যতা অকপটে স্বীকার করেন। তবে তিনি কারণ উল্লেখ করেননি। কম্পিউটার শিক্ষক এমাদুল হক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সুপারের গাফিলতির কারণে মাদরাসাটির এ অবস্থা।

সহকারী সুপার মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালের শেষ দিকে যোগদান করার পর দেখতে পাই শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। শুধু মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য, অফিস সহায়ক মধু মিয়া ও সুপার মো. আনিসুর রহমানের কারণেই মাদরাসাটির এ অবস্থা।

অফিস সহায়ক মধু মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, কয় টাহা লগবে! এ রকম প্রতিবছর তদন্ত হয়। কাগজপাতি সব সুপারের কাছে সঠিকভাবে জমা আছে। মাদরাসা সুপার মো. আনিসুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি একাধিকবার পরিদর্শন করেছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) আবদুল কাউয়ূম বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close