নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ
নিত্য যানজটে হুমকিতে শিল্প-কারখানা
* যানজট নিরসনে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ এসপি * ৫ আগস্টের পর পুরো পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে * অসহনীয় যানজটে মানুষের ভোগান্তি ও কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে
দীর্ঘদিন থেকে নারায়ণগঞ্জ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখলেও যানজট এখন এর অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজট শিল্পাঞ্চল খ্যাত নারায়ণগঞ্জবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানকার সড়ক, মহাসড়কে যানজট যেন নিত্যদিনকার ঘটনা। কোনো কোনো সময় ছুটির দিনেও সড়কগুলো যানজটে পূর্ণ থাকে।
অসহনীয় যানজটে মানুষের ভোগান্তি ও কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটের এই প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। পোশাক শিল্পাঞ্চলে যানজটের কারণে যেতে চাচ্ছেন না বিদেশি বায়াররা। এরফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পাশাপাশি এখন হুমকিতে পড়েছে শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানা। এভাবে চলতে থাকলে তৈরি পোশাক রপ্তানি কার্যক্রমে ধস নামাসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স।
সরজমিনে দেখা যায়, গত ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর দ্বিগুণ পরিমাণ রুট পারমিট ও ফিটনেস বিহীন যানবাহন, সড়ক মহাসড়কে অবৈধ পার্কিং। বেড়েছে শতগুণ ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিকসা ও ফুটপাত দখল। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, চাষাড়া থেকে পঞ্চবটি ও আদমজী সড়ক। একই অবস্থা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা সিলেট মহাসড়ক।
যানজটের কারণে পাঁচ মিনিটের চলাচলের গন্তব্য পার হতে হচ্ছে দুই থেকে আড়াই ঘন্টায়। এতে বিপাকে পড়েছে সময় মত স্কুল-কলেজের ও কর্মস্থলে যাওয়া শিক্ষার্থী-শ্রমিক-কর্মচারীরা। নষ্ট হচ্ছে দৈনন্দিন কর্মঘন্টা।
অন্যদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক বিসিক শিল্প নগরী ঘেষে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ৬ লেন সড়কের নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে অবর্ননীয় দুর্ভোগ এই সড়কে চলাচলকারী মানুষদের। বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানিতে, কখনো-কখনো খানাখন্দ ও কাদামাটিতে পণ্য এবং কাপড় বোঝাই যানবাহন উল্টে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মালামাল। এতে করে ওই সড়কে দীর্ঘতম যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবেই প্রতিদিনই সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত এই যানজটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
এদিকে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছোট এই শহরে বিভিন্ন পরিবহনের রেজিষ্ট্রিকৃত বাসের সংখ্যা রয়েছে ২৮৩ টি। সেই সাথে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ঢাকা-নারায়ণঞ্জ রুটে নতুন করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত তিনটি পরিবহনের বাস চালু করা রয়েছে। যাদের বাসের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। যেগুলো নিয়মিত ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াত করে। এর বাইরেও অনেক বাস রয়েছে। যাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
একই সাথে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার। পাশাপাশি মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, ট্যাংক লড়ী, ট্রাক, লেগুনা ও ট্রাক্টর তো রয়েছেই। তাদেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যার কারণে শহরের রাস্তায় বের হলেই ৫ থেকে ১০ মিনিটের রাস্তায় সময় লাগছে ঘণ্টা সমান।
বিসিক শিল্প নগরী ঘেঁষে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ৬ লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান জানান, নকশা পরিবর্তনের কারণে নির্মাণ কাজে ধীরগতি। খুব শীঘ্রই এই কাজ শেষ হলে সুফল ভোগ করবেন এখানকার মানুষ।
বিকেএমই’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্যাস সংকটসহ নানাভাবে পুরো ব্যবসা বাণিজ্যে হুমকির মুখে। এরপর যোগ হয়েছে রাস্তাঘাটের দুরবস্থা ও যানজট। কিছুদিন আগে বিসিকের চেয়ারম্যান নিজে এসে ফতুল্লা বিসিকে রাস্তাঘাটের এ দুরবস্থা দেখে গেছেন। রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে আমরা অনেকবার বসেছি। বিসিক বলছে তাদের ফান্ড নেই।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, তীব্র যানজটের কারণে এখানকার শিল্পাঞ্চলে বিদেশি বায়াররা আসতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। বায়াররা আসলে তাদের বিসিক নগরী পর্যন্ত পৌঁছতে দেড় থেকে দু’ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। এ কারণে তারা আসতে চাচ্ছেন না নারায়ণগঞ্জে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে তৈরি পোশাক রপ্তানি কার্যক্রমে ধস নামাসহ অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জানান প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, গত ৫ই আগস্টের পর পুরো পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সেই সুযোগে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারায়ণগঞ্জে ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, রুট পারমিটবিহীন বাস চলাচল শুরু হয়েছে। কোন অবৈধ যানবাহন ধরলে অনেক জায়গা থেকে প্রেসার আসে। অনেকেই ট্রাফিক আইন মানছে না। ইতোমধ্যে রুট পারমিটবিহীন বাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। লোকবল কম থাকায় কমিউনিটি পুলিশ এবং স্থানীয়দের নিয়ে যানজট নিরসনের কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় যানজট নিরসন হবে। সড়কে যানবাহ চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, স্বস্তি আসবে জনমনে।
"