সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
তদারকির অভাব
সুন্দরগঞ্জে হাটবাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ পিরানহা
দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০০৮ সালে পিরানহা উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বাজারে উঠছে সাগরের নানা জাতের মাছ। এর মধ্যে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পিরানহা। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য বিনষ্টকারী এই মাছ বিক্রেতারা চালিয়ে দিচ্ছেন সাগরের ‘রুপচাঁদা’ বা ‘থাই চাঁদা’ হিসেবে। রুপচাঁদার সঙ্গে পরিচিতি না থাকায় রাক্ষুসে মাছ পিরানহা কিনে ঠকছেন ভোক্তারা। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এই অবস্থা দেখা গেছে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০০৮ সালে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন থেকে আসা রাক্ষুসে মাছ পিরানহা উৎপাদন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়। পরে উপজেলার হাট-বাজারে দেখা মিলত না পিরানহার। কিন্তু নিয়মিত বাজার তদারকির অভাবে পৌর বাজার, চৈতন্য বাজার ও মীরগঞ্জ বাজারসহ গ্রামের বাজারগুলো এখন পিরানহার দখলে। সামুদ্রিক অন্য মাছের তুলনায় দাম একটু কম থাকায় ভোক্তারাও কিনছে বেশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে অন্যান্য মাছের পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পিরানহা। ভোক্তারা জিজ্ঞেস করলে একে সাগরের রুপচাঁদা, কখনো ‘থাই চাঁদা’ বলছেন বিক্রেতারা। প্রায় দেড় দশক ধরে বাজারে পিরানহার অনুপস্থিতি থাকার ফলে ভোক্তারা প্রায়ই ভুলে গেছে রাক্ষুসে পিরানহার উৎপাদন ও বিক্রয় নিষিদ্ধের কথা। পাশাপাশি বাজারে আসা নতুন ক্রেতা ও অনেকেরই রূপচাঁদা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় সহজেরই বিক্রেতাদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বাজারে অন্যান্য মাছের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতি কেজি পিরানহাও বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। রূপচাঁদা হিসেবে কিনছেন অসচেতন ভোক্তারা।
বাজারে ছবি তুলতে দেখে দ্রুত পিরানহার বাক্সে ভরে দোকান নিয়ে মীরগঞ্জ বাজার থেকে চম্পট দিতে দেখা গেল বিক্রেতা গোপালকে। মাছ বাজারে পশ্চিমের সারিতে থাকা অপর বিক্রেতা কথা বলতে চাইছিলেন না। তবে নাম না বলার শর্তে বললেন, পিরানহা নিষিদ্ধ হলেও মাসখানেক ধরে নওগাঁর দিক থেকে আড়তে পিরানহা আসছে।
নিষিদ্ধ পিরানহা কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে আ. জব্বার (২৫) নামের এক ক্রেতা বললেন, ‘এ মাছ আমরা কোনোদিন দেখি নাই। চিনিও না, নামও জানি না। দোকানদার বলছে, রুপচাঁদা মাছ। তাই কিনছি।’
নিয়মিত বাজার তদারকির অভাবে মূলত দেশি মাছ বিনাশকারী রাক্ষুসে পিরানহা পৌরসভার মতো জায়গায়ও প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। শুধু জেলা সদর নয়, উপজেলা পর্যায়ের সব হাটবাজারেও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা দরকার বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে জেলার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও কৃষি অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে যৌথভাবে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। তারপর বাজার তদারিকি অভিযান শুরু হবে।
জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘পিরানহা একটি নিষিদ্ধ মাছ। এর আগেও আমরা বাজারে অভিযান চালিয়ে এ মাছ পেয়ে মাটিতে পুঁতে রেখেছিলাম। সামনের দিনগুলোতে যেন এই নিষিদ্ধ মাছ কেউ যাতে বিক্রি করতে না পারে, সে জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
"