কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
পটুয়াখালীর কলাপাড়া
বিক্ষোভের মুখে বন্ধ ভূমিহীন ১৩৬ পরিবারের উচ্ছেদ
* উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে পুনর্বাসনের আগে উচ্ছেদ না করার দাবি * নির্দেশ দেওয়ার আগে উচ্ছেদ অভিযোনে সড়কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিক্ষোভের মুখে ভূমিহীন ১৩৬ পরিবারের উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামে বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাসকারী জিয়া কলোনীর পরিবারকে এক্সকাভেটর (ভেকু) নিয়ে উচ্ছেদ করতে যায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উচ্ছেদ বন্ধ হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেড়িবাঁধের জিয়া কলোনীর ভূমিহীন পরিবারগুলোকে উচ্ছেদে করতে কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই উচ্ছেদ করতে আসে সড়কের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভ করে পরিবারগুলোর সদস্যরা। এতে পিছু হটতে বাধ্য হয় ঠিকাদারের লোকজন। বেড়িবাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণের জন্য এসব পরিবার উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তারা, তবে তাদের কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে উচ্ছেদ আতংকে শনিবার সকালেই ভূমিহীন পরিবারের একটি দল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে দেখা করে পুনর্বাসনের আগে উচ্ছেদ না করার দাবী জানান। ইউএনও বাসভবনে এই আলোচনা চলাকালীন সময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ভেকু নিয়ে উচ্ছেদ শুরু করতে যায়।
এ অবস্থায় ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম তার ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘জিয়া কলোনি সংলগ্ন ১৩৬ পরিবার উচ্ছেদ করে রাস্তা নির্মাণে উপজেলা প্রশাসন, কলাপাড়া কিংবা উপজেলা ভূমি অফিস, কলাপাড়া কোনো নির্দেশনা দেয়নি। ১৩৬ পরিবারের থাকার জায়গা নিশ্চিত না করে কোনো উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে না মর্মে ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশি¬ষ্ট ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে বিগত দুই দশক আগে বাস্তুভিটাহীন হওয়ায় ভূমিহীন পরিবারগুলোকে বসবাসের জন্য ইটবাড়িয়া গ্রামের আন্ধারমানিক নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধের ঢালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমিতে কলোনী করে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। এর পর থেকে তারা বেড়িবাঁধের ঢালে বসবাস করে আসছে। সম্প্রতি পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল থেকে পায়রা বন্দর প্রশাসনিক ভবন হয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা আঞ্চলিক সড়কের সাথে যুক্ত হওয়ার বিকল্প সড়ক হিসাবে পায়রা বন্দরের গেট থেকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রাস্তা নির্মাণ করতে কলোনীসহ বেড়িবাঁধের ঢালে বসবসকারী ১৩৬টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ফলে ভূমিহীন মুক্ত কলাপাড়ায় নতুন করে ১৩৬টি পরিবার নতুন করে ভূমিহীন হতে যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের উচ্ছেদ করা হলেও কোনো ধরনের ক্ষতিপুরন বা পুনর্বাসন করা হবে না। তা তারা জানতে পেরেছে। এই পরিস্থিতিতে মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয় হারালে তাদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। উচ্ছেদের পরে তারা কোথায় থাকবে, কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
"