জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট
কৃষি উপদেষ্টা বরাবর লিখিত দাবি
গুদাম থেকে সার কিনতে চান খুচরা বিক্রেতারা
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার (বাফা) গুদাম থেকে সরাসরি সার কিনতে চান প্রান্তিক পর্যায়ের কার্ডধারী খুচরা সার বিক্রেতারা। সার সিন্ডিকেট ও কালোবাজির বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ নেতাদের কারণে সাফল্য আসেনি। এ কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বঞ্চিত রয়েছেন বলে দাবি করছেন তারা।
এ জন্য লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কৃষি উপদেষ্টা বরাবরে লিখিত দাবি তুলেন জেলার সার বিক্রেতারা। গতকাল রবিবার বিকেলে এই দাবি সম্বলিত চিঠি পাঠানো হয়। তবে নিবন্ধিত খুচরা বিক্রেতারা বাফার গুদাম থেকে কিনতে চাইলে তাদের তদারকি (মনিটরিং) করার মতো জনবল নেই জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি, সার মজুদ সিন্ডিকেট ভাঙতে ও সার পাচার রোধে ডিলার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ি কৃষকদের হাতের নাগালে ন্যায্যমূল্যে সার বিক্রির লক্ষ্যে ২০০৯ সালে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে কার্ডধারী খুচরা সার বিক্রেতা নিয়োগ করা হয়। প্রতিটি খুচরা বিক্রেতা ৩০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে কৃষি অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত কার্ড সংগ্রহ করেন। সেখানে এসব কার্ডধারীরা ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিলারের কাছ থেকে বরাদ্ধ নিয়ে সরাসরি কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করবেন। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিলার বাফার গুদাম থেকে সার কিনে তার বরাদ্ধের অর্ধেক কার্ডধারী খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কেজি প্রতি এক টাকা কমিশনে বিক্রি করবেন। খুচরা বিক্রেতারা ডিলারের কাছ থেকে কেনা সার সরাসরি কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করতে পারবেন। এতে সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যে সার ক্রয়ের সুযোগ পান কৃষকরা। এতে একই সঙ্গে সার কেনায় কৃষকদের ভোগান্তিও লাঘব হয়।
এদিকে সরকারি সিদ্ধান্তে প্রথম দিকে বাফার গুদাম থেকে সার কিনে বিধিমতো কার্ডধারীদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিত ইউনিয়ন পরির্যায়ের বিসিআইসি ডিলাররা। কিন্তু কিছু দিন পরেই কার্ডধারীদের কাছে সার বিক্রি না করে, সিন্ডিকেটে কালোবাজারে বিক্রি শুরু করেন অসাধু কতিপয় ডিলার। এসব ডিলার কার্ডধারীদের বরাদ্দের সার না দিয়ে কার্ডবিহীন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। এতে কেজি প্রতি এক টাকা কমিশন আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠে ডিলারদের বিরুদ্ধে। এ কারণে নিবন্ধন করেও কমিশনে সার কিনতে ব্যর্থ হচ্ছেন কার্ডধারী খুচরা সার বিক্রেতারা।
নিবন্ধিত খুচরা বিক্রেতা মশিউর রহমান বলেন, ‘বিধিমত আমাদের বরাদ্দের সার না দিয়ে অনিবন্ধিত খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন ইউনিয়নের ডিলাররা। অনেক সময় সংকট দিখিয়ে বেশি দামে সার কিনতে হয় আমাদের। এমন কি ইউনিয়নের ডিলারের বরাদ্ধ কত থাকে সেই তথ্যও দেওয়া হয় না। সার কিনলে কোনো রশিদও দেওয়া হয় না। অনেক বার বিষয়গুলো নিয়ে অভিযোগ করেছি। কিন্তু সরকারী দলের নেতাদের চাপে তা আলোর মুখ দেখেনি।’
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাইফুল আরেফিন বলেন, ‘জেলায় মোট ৮৬ জন নিবন্ধিত খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন। তারা ইউনিয়নের ডিলারের কাছ থেকে কিনে কৃষকদের কাছে বিক্রি করবেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের ডিলারদের নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। নিবন্ধিত খুচরা বিক্রেতারা বাফার গুদাম থেকে কিনতে চাইলে তাদের মনিটরিং করার মতো জনবল নেই। তবে রাষ্ট্রে নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলে, তা করা যেতে পারে।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার বলেন, নিবন্ধিত খুচরা সার বিক্রেতারা যে দাবি তুলেছেন, তা জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আমরা সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় খুচরা বিক্রেতারা কেন বিধিমত কমিশনে সার পাচ্ছেন না, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
"