সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জে নদীভাঙন
বাঁধের ঢালে ভূমিহীন পরিবারগুলোর মানবেতর জীবন
সিরাজগঞ্জে প্রতিবছরই যমুনা নদীর ভাঙ্গনে গৃহহীন হচ্ছে শত শত পরিবার। ভিটে মাটিহীন এই ভূমিহীন পরিবার গুলো বাঁধের ঢালে বা অন্যের জায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। জেলার কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদরে নদী ভাঙ্গনকৃত বাঁধ এলাকায় এই সব ভূমিহীন পরিবার গুলোর নেই কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
জেলার শাহজাদপুর কৈজুরী এলাকার স্বামী হারা ও যমুনার ভাঙ্গনে বসতবাড়ি হারানো আমিনা বেগম (৫০) জানান, নিজের কোনো থাকার জায়গা নেই। কৈজুরী ইউনিয়নের হাট পাচিল এলাকায় পাউবোর বাঁধের ঢালে এক আত্মীয়ের তোলা ঝুপড়ি ঘরে ছেলেমেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে বাস করেন। তার ছেলে হানিফ লেখাপড়া বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরেছে। সে নদীতে জেলেদের জাল ঠেলে দিনে এক-দেড়শ টাকা পায়। সেটা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে।
সড়ক দুর্ঘটনায় দিন মজুর স্বামী হারা আসমা খাতুন জানান, স্বামী এবং বাড়ি হারিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। রোজগারের কোনো পথ নেই তার। রিক্সা চালক ও তার স্ত্রী সখিনা জানান, যমুনার ভাঙ্গনে সব হারিয়ে আজ বাঁধের ঢালে ঘর তুলে বাস করছি। খোলা আকাশের নিচে রান্না বাড়া, বিদ্যুৎ বিহীন এই ঝুপড়ি ঘরে অতি কষ্টে বসবাস করছি।
কৃষি দিনমজুর মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, ১২ শতক জমিতে বাড়ি ছিল। দেড় বছর হলো সেটা যমুনায় বিলীন হয়েছে। এখন আমি বাস্তুহারা। কৈজুরী ইউনিয়নের হাট পাচিল এলাকায় পাউবোর বাঁধের ঢালে ৫০ থেকে ৬০টি পরিবার বসবাস করছে। এ ছাড়া ভাড়া বাড়িতেও ওঠেছে অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, এ অঞ্চলে যমুনার ভাঙন চললেও বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। তিন থেকে চার বছর আগে সরকার একটি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প দিলেও ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে কাজ এগোচ্ছে না।
হাটপাচিল এলাকায় বসবাসরত শিক্ষক মো. শাহিন আলম বলেন, এই এলাকায় প্রায় সাড়ে তিনশোর মতো ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গিয়েছিল। অনেকের এক শতাংশ জায়গা কেনার অবস্থা নেই। সরকার যদি গুচ্ছগ্রাম করে তাদের ঠাঁই দেয় তাহলে তারা মাথা গোজার ঠাই পাবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানান, এখন আশ্রয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে কোনো বরাদ্দ নেই। আমরা তালিকা করে রাখা হয়েছে। বরাদ্দ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, জেলায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সহ রাণীগ্রাম, চর-মালশাপাড়া এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন এলাকার লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। আমরা খাস জমি পেলেই এই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুঃবাসনের ব্যবস্থা করবো।
"