শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি
কালিদাশখালী-আড়পাড়া খাল
শালিখায় খালের দুপাশে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার
দীর্ঘ বিশ বছরের বেশি সময় ধরে মাগুরার শালিখার কালিদাসখালী-আড়পাড়া খালের দুই পার্শ্বে অবৈধভাবে বাঁধ স্থাপনা করে মাছ শিকার করছেন সদর উপজেলার কুঁচিয়ামোড়া ইউনিয়নের মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা। কোনো বন্দোবস্ত বা ইজারা ছাড়াই বছরের পর মাছ ধরছেন তারা অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শালিখা উপজেলার বরইচারা- কুঁচিয়ামোড়া গ্রামের মধ্যবর্তী এই মুক্ত জলাশয়ে মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষের মাছ ধরার অধিকার থাকলেও তা করতে দেন না ওই প্রভাবশালী চক্র। অভিযোগ রয়েছে, শ্রীহট্ট, পুকুরিয়া, কুমারকোটা ও আনন্দনগরসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে মাছ শিকার করতে আসলে অনেকের কাছ থেকে জাল, বড়শি, গাজে (মাছ রাখার পাত্র)-সহ বিভিন্ন মাছ ধরার ও রাখার সরঞ্জাম কেড়ে নেন প্রভাবশালী ওই সমিতির সদস্যরা।
আড়পাড়া ইউনিয়নের কুমারকোটা গ্রাম থেকে মাছ শিকার করতে আসা মোতালেব বলেন, আমি এইখানে মাছ শিকার করতে আসলে কুঁচিয়ামোড়ার কিছু লোকজন আমাকে মারধর করে। আমার কাছ থেকে জাল ও গাজে কেড়ে নেয়।
একই ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের কিতাবুল বলেন, আমাদের এই খাল থেকে মাছ ধরতে দেয় না, আমরা মাছ শিকার করতে আসলে আমাদের মাছ মারার সরঞ্জাম কেড়ে নেয় মারধর করে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে মাস্তান ভাড়া করে এনে আমাদের হুমকি দেয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরইচারা- কুঁচিয়ামোড়ার বেড়িবাঁধের উপর নির্মিত স্থানীয়ভাবে দোসীমানার খাল নামে পরিচিত কালিদাসখালী-আড়পাড়া নামে এক খালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক একটি সুইচগেইট নির্মাণ করা হয়েছে। যার পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে ফটকী নদী এবং দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে বড় বিল। সুইচ গেটের দুই পার্শ্বের অন্তত দেড় কিলোমিটার জায়গাজুড়ে চাঁন বেড় ও বড় বড় বাশ দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে একটি লাল পতাকাও টানানো হয়েছে। কয়েকটি টং ঘর তৈরি করে রাত দিন মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাগুরা সদর উপজেলার কুঁচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা। খালের পাশ্ববর্তী ফটকী নদীর কিছু জায়গাতেও বাঁধ নির্মাণ করে মাছ শিকার করছেন তারা। প্রতি মৌসুমে দুই পাশের পুরো খাল সেচে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ শিকার করেন কুঁচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ শিকার করা নিষেধ থাকলেও তা মানছেন না তারা।
স্থানীয় সচেতন মহল মতে, মুক্ত জলাশয় থেকে সবাইকে উন্মুক্তভাবে মাছ শিকার করার সুযোগ করে দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়মের মধ্য দিয়ে মুক্ত জলাশয়ের মাছ শিকারের দাবি তাদের।
খালের ওপর নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইসগেটের দায়িত্বে থাকা লালমিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, ওই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা যে জায়গা থেকে মাছ শিকার করছে সেটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা। এই জায়গাটি আমাদের দপ্তর থেকে কখনোই ইজারা দেওয়া হয় না। তারা মূলত সাবেক সংসদ সদস্যের এপিএস শিশির সরকারের ক্ষমতা দেখিয়ে বিশ বছরের বেশি সময় ধরে এমনটা করে আসছে।
এদিকে কুচিয়ামোড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সুজন বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ডিসিআর কেটে এই জায়গা থেকে মাছ শিকার করে আসছি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে।’ তবে ডিসিআর বা ইজারার কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। দেখতে চাইলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দেখে আসতে বলেন তিনি।
মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য রতন প্রামাণিক বলেন, আমরা ত্রিশ বছর ধরে এই খাল থেকে মাছ শিকার করছি। তবে কীসের মূলে শিকার করছি, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এ ব্যাপারে জানেন আমাদের মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি।
জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) সরোয়ার জাহান সুজন জানান, স্লুইসগেটের নিম্নগামী খালটি সম্পূর্ণই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায়। এটি আমরা কখনোই ইজারা দিইনি। এখান থেকে সকলেই মাছ শিকার করতে পারবে। কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এককভাবে মাছ শিকার করতে পারবে না।
"