মিলন রায়হান, জয়পুরহাট
২ কোটি টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক
ভালো আয় থাকা সত্ত্বেও খালি তহবিল, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া
পাঁচবিবির নিকড়দিঘী নান্দুলা উচ্চবিদ্যালয়
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার নিকড়দিঘী নান্দুলা উচ্চবিদ্যালয়ের বিভিন্ন তহবিল থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে সদ্য সাবেক প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এদিকে অভিযোগে পর প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিদ্যালয়টি জেলার পাঁচবিবি উপজেলার নিকড়দিঘী এলাকায় অবস্থিত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন। তবে তার দাবি, জোর করে তাকে পদত্যাগ করানো হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৯ সময়ে বিদ্যালয়ের ৬ দশমিক ৭৮ একর পুকুর ও ১০ একর ধানী জমি লিজ বাবদ ৭৮ লাখ ৭৪ হাজার আয় হয়। এ ছাড়া ২০১৯-২৪ সাল পর্যন্ত জমি থেকে আয় ৩০ লাখ টাকা ও পুকুর থেকে আয় ৮৫ লাখ ৯১ হাজার টাকাসহ বিবিধ থেকে আয় হয় ৫ লাখ টাকা। সব মিলে আয় প্রায় এক কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এই টাকা বিদ্যালয়ের তহবিল বা ব্যাংকে জমা করেননি প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের যথেষ্ট আয় থাকা সত্বেও ৪৫ হাজর টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভায় আলোচনা না করে শুধু সভাপতির যোগসাজসে টাকাগুলো আত্মসাত করেছেন প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের স্কাউট শিক্ষার্থী নাছিম মাহমুদ নিরব বলেন, ‘আমাদের স্কাউট ফান্ডে (তহবিলে) টাকা জমা আছে। কিন্তু আমরা কোনো প্রোগ্রামে টাকা চাইলে তিনি (প্রধান শিক্ষক) দেন না।’
আখতারুল ইসলাম মাসুদ, মেহেদী হাসানসহ একাধিক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের জমি থেকে কোটি টাকার আয় হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগসাজস করে অর্থ আত্মসাত করেছেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ সাফিউল¬াহ জানান, পুকুর লিজের ৪১ লাখ টাকার মধ্যে ১২ লাখ বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা হয়েছে। এরপরও দেড় বছর লিজ ছাড়ায় পুকুর চাষাবাদ করেছে প্রভাবশালীরা। অথচ পুকুরের ৬ লাখ টাকা খাজনা ও বিদ্যালয়ের ৪৫ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছেন ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। কিন্তু এসব আওয়ামী লীগের আগ্রাসনে হয়েছে, তারাই এসব ভোগদখল করেছে। এখন আমার ওপর প্রভাব আসছে। গত ৫ আগস্টে সরকার পতনের আগে তো কেউ কিছু বলেনি। আগে তো আমি জবাই করা গরুর মত ছটপট করেছি।’
জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও পাঁচবিবি ইউএনও আরিফা সুলতানা বলেন, ‘সাবেক প্রধান শিক্ষক কবির উদ্দিনের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
"