দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

খুলনার দাকোপ

ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ির তিনগুণ উৎপাদনের আশা

খুলনার দাকোপে ক্লাস্টারপদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে আগ্রহী হয়ে উপছেন মাছচাষিরা। উপজেলায় বেশ কিছুকাল সময় ধরে চিংড়ি মারা যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। তবে ক্লাস্টার পদ্ধতি চাষিদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে। উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধির আশা মৎস্য অধিদপ্তরের।

সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রকল্পের আওতায় একই স্থানে ৮টি ক্লাস্টার চিংড়ি ঘের পাশাপাশি রেখে চাষ করা হচ্ছে। খুলনা অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৩০০টি স্থানে প্রথমবারের মতো এ পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে।

জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি রোগমুক্ত পোনা না পাওয়া, ঘেরের গভীরতা কম থাকাসহ বিভিন্ন কারণে গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে খুলনা অঞ্চলে চিংড়ি উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমছিল। এ কারণে একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল কৃষক, তেমনি দেশের চিংড়ি রফতানি বাজারও সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল। এ পরিস্থিতিতে চিংড়ির উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো খুলনা অঞ্চলে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষের উদ্যোগ নেয় মৎস্য অধিদফতর।

দাকোপ উপজেলা মোট ৯টি ইউনিয়নে ও একটি পৌরসভা মিলে ৮টি ক্লাস্টার গঠন করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি যেখানে চিংড়ি উৎপাদন হয় ১০০ থেকে ২৫০ কেজি। সেখানে এ পদ্ধতিতে চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হেক্টর প্রতি ৫০০-থেকে ৬০০ কেজি। এপ্রিলে পোনা ছাড়ার পর এরই মধ্যে ঘেরগুলোতে চিংড়ি পরিপূর্ণ হয়ে ওঠছে। তবে পুকুর খননে সরকারি সহায়তার দাবি তাদের।

উপজেলার তিলডাঙা ইউনিয়নের ক্লাস্টার ঘের করছেন উজ্জ্বল রায়, রাজিব সানা, দেবব্রত মল্লিক। কয়েক বছর ধরে ঘের করে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এই ঘের ব্যবসায়িরা জানান, ঘেরের পিছনে যে টাকা ব্যয় হতো লাভ তো দূরে থাক, আসল টাকাই উঠত না। মাছ পুষ্ট হয়ে ওঠার আগেই অর্ধেকের বেশি মাছ মারা যেত। তবে এ বছর মৎস্য অধিদফতর থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এখন একসঙ্গে ২৫টি ঘের পাশাপাশি রেখে চাষ হচ্ছে। এসব ঘেরের গভীরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, মানসম্মত পোনা ছাড়া হয়েছে। এপ্রিলে পোনা ছাড়ার পর এখন অনেকটা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠছে। আশা আছে আগের থেকে অন্তত তিনগুণ বেশি মাছ উৎপাদন হবে।

পানখালি ইউনিয়নের গলদা চিংড়ি চাষি কিশোর শেখ, গোপাল গাইন বলেন, ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি ঘের করলে আমাদের খরচ সামান্য বেশি হয়। লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে এখন সন্তুষ্ট।

উপজেলার পানখালি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ বলেন, ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ চিংড়ির ওপর নির্ভরশীল। এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষকে যদি আরও সম্প্রসারণ করা যায় তাহলে আরও অনেক চাষি উপকৃত হবে।

চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এ প্রকল্প জানিয়ে মৎস্য অধিদফতর বলছে, সীমাবদ্ধতা দূর করে আগামীতে এ প্রকল্প আরও সম্প্রসারণ করা হবে।

উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের মেরিন ফিশারিশ কর্মকর্তা বিপুল কুমার দাস জানান, চলতি অর্থবছরে দাকোপে মোট ৮টি ক্লাস্টার গঠন করা হয়েছে। ২০০ জনকে চিংড়ি চাষে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চাষিরা এখন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিংড়ি উৎপাদনে সক্ষম হবে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রনজিত কুমার বলেন, ক্লাস্টারপদ্ধতিতে চাষে তিনগুণেরও বেশি চিংড়ি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। আগামীতে এ পদ্ধতি আরো বাড়ানোর লক্ষ আছে। চলতি বছর সারা দেশে সনাতন, উন্নত সনাতন ও উন্নত পদ্ধতি মিলে ৩ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। তবে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে শুধু দাকোপেই চিংড়ি উৎপাদন হবে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার মেট্রিক টন। তবে আধা নবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হলে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close