হুমায়ুন কবির, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা)
দোকান দখলে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত অর্ধশত, গুলিবিদ্ধ ২
নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌরশহরে মধ্যবাজারে একটি দোকান ঘরের জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। গত বুধবার রাতে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া উভয় পক্ষ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম হিলালী গ্রুপের অনুসারী নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। এতে আহত ব্যক্তিদের কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সংঘর্ষে জড়িত হওয়া নাসির খন্দকার, উজ্জ্বল খন্দকার, আল আমিন খন্দকারের একটি গ্রুপ এবং প্রতিপক্ষ জসিম উদ্দিন ভূইয়া, জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া ও সাইফুল আলম ভুঁইয়ার গ্রুপের লোকজনই কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম হিলালী গ্রুপের অনুসারী নেতা বলে পরিচিত। সংঘর্ষে বিষয়ে জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম হিলালীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দুয়া মধ্যবাজারে থাকা সোহেল আমিন নামে এক ব্যক্তির একটি দোকানের জায়গা বুধবার রাতে দখল করতে যান পৌর শহরের দিগদাইর গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির খন্দকারের বড় ভাই আল আমিন খন্দকার ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকার। একই সময়ে সোহেল আমিনের পক্ষে ওই দোকানে যান উপজেলার চকবাট্টা গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূইয়া। তিনি নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম হিলালীর ভগ্নিপতি ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি জয়নাল ভুঁইয়ার বড় ভাই এবং উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাইফুল ভুঁইয়ার বাবা। মধ্যবাজারে এক পর্যায়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে যুবদল নেতা নাসির খন্দকারের পক্ষে পৌরসভার দিগদাইর গ্রামের লোকজন এবং বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন ভূইয়ার পক্ষে উপজেলার চিরাং ইউনিয়নে চকবাট্টা গ্রামের লোকজন গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত উভয়পক্ষের অর্ধশত লোকজন আহত হন। সংঘর্ষের খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
জানতে চাইলে কেন্দুয়া বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া জানান, যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাসির খন্দকারের ভাই আল আমিন খন্দকার ও উজ্জ্বল খন্দকার লোকজন নিয়ে সোহেল আমিনের দোকানে তালা দিয়েছিলেন। পরে আমাদের লোকজন বাধা দিলে দোকানের তালা খুলে দেন। কিন্তু ব্যবসা চালাতে সোহেলকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করেন, সংঘর্ষের মধ্যে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাসির খন্দকার ও তার লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর গুলি চালায়। এতে ছাত্রদল নেতা রনি মিয়া ও যুবদল নেতা রফিকুল ইসলাম দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তারা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
জানতে চাইলে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাসির খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাসির খন্দকারের চাচা ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক উজ্জ্বল খন্দকার জানান, ‘মধ্যবাজারে থাকা সোহেল আমিন নামের দোকানের মালিক নাসির খন্দকারের ভাই আল আমিন খন্দকার। তিনি তার দোকানে তালা মেরে দেন। এ সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও তার ভাই জসিম উদ্দিন ভূইয়া টাকার বিনিময়ে দোকানের তালা খুলে সোহেলকে দোকান বুঝিয়ে দেয়। এনিয়ে তর্ক-বিতর্কের পরই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।’
উজ্জ্বল খন্দকার আরো বলেন, ‘আমরা দুই গ্রুপই জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম হিলালী গ্রুপের লোকজন। তবে জয়নাল আবেদীন আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধে যে গুলির অভিযোগ করেছেন, তা মিথ্যা। এখানে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অনুপ কুমার সরকার জানান, ‘উপেজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।’ তাদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ থাকার কথাও জানান তিনি।
জানতে চাইলে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘কেন্দুয়া পৌর শহরের মধ্যবাজারে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
"