প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
নান্দাইল-জগন্নাথপুর-পোরশা
ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাট, ভুতুড়ে বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহক
ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বলছেন বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা * সামর্থ্যবানরা ঝুঁকছেন আইপিএসের দিকে * হাত পাখার ওপর নির্ভরশীল হচ্ছেন অনেকেই
গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুৎবিভ্রাট (লোডশেডিং)। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গরমে কষ্ট পাচ্ছেন গ্রাহকরা। এছাড়া ভুতুরে বিদ্যুৎ বিলে বিরক্ত গ্রাহকরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ক্ষোভের ঝড়। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ময়মনসিংহের নান্দাইল প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নান্দাইল জোনাল অফিসের আওতাধীন প্রায় সব এলাকায় রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। তা ছাড়া প্রতি মাসেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। যার ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও গ্রাহকরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন। বিদ্যুতের ‘ভেলকিবাজি’তে সামর্থ্যবানরা ঝুঁকছেন আইপিএসের দিকে।
এদিকে, কৃষকদের আইপিএস কেনার সামর্থ্য নাই। তাই রাতে হাত পাখার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।
গ্রাহক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ১০ মিনিট বিদ্যুৎ না থাকলেই আমার বিদেশি গরুগুলো গরমে অসুস্থ হয়ে যায়। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল আসছে দ্বিগুণ। বিল নিয়ে অফিসে গেলে বলে সংশোধন করে দিচ্ছি। বার বার বলার পরেও কোনো কাজে আসছে না।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ফরিদ মিয়া ও শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা কারেন্ট থাকে না। মাঝে মাঝে টানা ৬ ঘণ্টাও লোডশেডিং চলে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে।’
শিক্ষক ফখর উদ্দিন ভূঁইয়া লিখেন, পল্লী বিদ্যুতের দায়সারা কারবার। আন্দাজি (ভুতুরে) বিদ্যুৎ বিল দিতে দিতে জীবন শেষ।
কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নান্দাইল জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী বিল্পব চন্দ্র সরকার বলেন, নান্দাইলের আওতাধীন বিদ্যুতের চাহিদা ৩৩ মেগাওয়াট। প্রায় ৩ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এ চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১২ থেকে ১৫ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার জগন্নাথপুরে চলছে ভয়াবহ বিদ্যুৎবিভ্রাট। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং হওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে উপজেলাবাসীর মধ্যে। গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের ভেলকিবাজির কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভের ঝড় বইছে।
উপজেলা বিদুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথপুর ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে কমিয়ে আনায় ঘাটতি পূরণের জন্য এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং শুরু হয়। আমদানি করা বিদুৎ ও গ্যাসভিত্তিক কিছু প্ল্যান্টগুলোতে গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ আছে এজন্য বেশি সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে বিদ্যুৎবিভ্রাটে মোবাইল নেটওয়ার্কও ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে রবি ও এয়ালটেলের মতো মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক থাকে না।
ব্যবসায়ী ওয়ালি উল্লাহ বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্রিজে থাকা জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানি তোলা যাচ্ছে না। গন্ধর্ব্বপুর গ্রামের এখলাছুর রহমান বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আজিজুল ইসলাম আজাদ বলেন, আমরা জেনেছি ভারত থেকে বিদুৎ আমদানি হতো, এগুলো বিভিন্নভাবে বন্ধ রয়েছে। এই গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। আমাদের ৬টি পিলার রয়েছে। এদের মধ্যে ৩টায় ১ ঘণ্টা দেই। অন্য ৩টায় ১ ঘণ্টা। এভাবে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলে। আগামী ১১ তারিখ মিটিং আছে।
নওগাঁর পোরশা প্রতিনিধি জানান, জেলার পোরশায় ২০১৬ সালে নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জোনাল অফিসের কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই দলীয় বিভিন্ন নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় কিছু লোক শুরু করে দালালি। দালালির সুযোগ করে দেন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অঙ্ক নিতেন কর্মকর্তারা। সুযোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
অনিয়ম, দুর্নীতি, ভুতুড়ে বিল আর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরা। গ্রাহক নিজে কোনো কাজ করতে গেলে পাত্তা দিতেন না পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মরত কর্মকর্তারা। কাজ করিয়ে নিতে হয় ওই অফিসে থাকা দালালদের মাধ্যমে। কর্মকর্তাদের কাছে কোনো কাজ নিয়ে গেলে কাগজপত্রের ভুল বের করেন। পরে অফিসের বাইরে থাকা দালালরা তার কাজ করে দিতে পারবে বলে গোপনস্থানে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। সময়মত বিল পরিশোধ করেও পরের মাসে বিলের কাগজে আগের বিল তুলে দেওয়া হয় এমন অভিযোগও রয়েছে গ্রাহকের। বিদ্যুতের ব্যবহার স্বাভাবিক থাকলেও হুটহাট করেই মাস শেষে বিল বেশি দিতে বাধ্য করা হয় গ্রাহকদের। চলে সীমাহীন লোডশেডিং।
উপজেলার ছাওড় গ্রামের গ্রাহক আব্দুল বারী অভিযোগ করে জানান, তিনি সময়মত বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে পান না। কাগজ পেলেও বিল পরিষদ করার সময়ও থাকে না।
সহড়ন্দ গ্রামের রাশেদুল হক জানান, তার প্রায় মাসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে বিল আসে। বিদ্যুৎ ব্যবহার একই রকম থাকলেও হঠাৎ করে কোনো মাসে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা বিল আসে।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পোরশা জোনাল অফিসের ডিজিএম সেকেন্দার আলী সব অভিযোগের উত্তর দিতে না চাইলেও তিনি দাবি করেন, তার অফিস দালাল ও দুর্নীতিমুক্ত।
"